সূর্য মন্দির বললেই সবার মাথায় প্রথম যে মন্দিরের কথা আসে তা হল কোনারকের সূর্য মন্দির। যেটি ভারতের সাতটি বিস্ময়ের অন্যতম একটি। বছর বছর শত শত দর্শনার্থী পুরীতে যান কোনারকের এই মন্দির দেখার আশায়। ভারতে এখনও পর্যন্ত মাত্র ১৪ টি জায়গায় সূর্য মন্দিরের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। তবে আজ পুরীর সূর্য মন্দিরের কথা নয়, এমন একটি সূর্য মন্দিরের সন্ধান দেব যেটা কিনা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গেই! শুধু তাই নয়, এই মন্দির আবার কোনারকের সূর্য মন্দিরের থেকেও বহু প্রাচীন। তাই ন্যাশনাল হেরিটেজের তকমায় যে পুরস্কৃত, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
কিন্তু কোথায় রয়েছে সেই মন্দির? হ্যাঁ, এবার তবে জেনে নেওয়া যাক সেই মন্দিরের খোঁজ। সেই মন্দির রয়েছে আমাদের লাল মাটির দেশে। বাঁকুড়া জেলার ওন্দা থানার অন্তর্গত সোনাতপল গ্রামে অবস্থিত সোনাতপল সূর্য মন্দির। দ্বারকেশ্বর নদীর তীরে অবস্থিত এক প্রাচীন গ্রাম এই সোনাতপল। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বোর্ড থেকে জানা যায় মন্দিরটি তৈরি হয়েছে আনুমানিক খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীতে। এটি ওই সময় তৈরি ইটের রেখা দেউল। উঁচু ইটের ভিতের উপর তৈরি এই সূর্য মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ১২০ ফুট। এত উঁচু মন্দির মানভূম অঞ্চলে আর কোথাও নেই।
তবে বিস্ময়কর ব্যাপার হল নাম সূর্য মন্দির হলেও এখানে সূর্যদেব নেই। সূর্য মন্দির বলা হয় কারণ মন্দিরটি পূর্বমুখী হওয়ায় দিনের প্রথম সূর্যকিরণ এসে পড়ে মন্দিরের গর্ভগৃহে। আলোকিত করে এই মন্দিরের গর্ভগৃহকে। তাই জন্য এটি সূর্য মন্দির নামে পরিচিত। এই দেউলে আগে কোন দেবদেবী ছিল না। কিন্তু বর্তমানে একটি ত্রিশূল ও শিবলিঙ্গ স্থাপন করা হয়েছে। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ এই মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক হলেও অবস্থা বেশ জরাজীর্ণ ও ভগ্নপ্রায়। সংস্কারের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তবে ভগ্নপ্রায় দশায় পাওয়া এই ইটের রেখ দেউলটি বাঁকুড়ার মন্দির স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন।
আমরা কমবেশি সবাই জানি যে এই লাল মাটির দেশে পরতে পরতে মিশে রয়েছে ইতিহাস। মল্ল রাজাদের নানা কর্মকাণ্ডের সাক্ষী থেকে শুরু করে বর্গী হামলার সাক্ষী বাঁকুড়া। আবার এখানে অস্তিত্ব রয়েছে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের পুরাকীর্তিরও। এছাড়াও মাটির নানা শিল্পরীতির টানে আমরা অনেকেই গিয়ে হাজির হই সেখানে। তাই এবার গন্তব্য বাঁকুড়া হলে একেবারেই ভুলবেন না সোনাতপল গ্রামের সূর্য মন্দিরের কথা।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – পূণ্যব্রত বর্মা
Discussion about this post