বেশিরভাগ ভ্রমণপ্রিয়দের কাছে বর্ষাকাল একপ্রকার অলিখিতভাবেই বেশ অপছন্দের। পাহাড়ি এলাকায় এসময় বৃষ্টি, ধস প্রভৃতি নানান কারণে পর্যটকরা সেই পথ খানিকটা এড়িয়েই চলেন। তবে ভ্রমণপিপাসু মন কি আর কোনো বাঁধা মানে? তাই বৃষ্টিকে সঙ্গী করেই প্রকৃতিকে উপভোগ করতে বেড়িয়ে পড়া হয় কোনো না কোনো উদ্দেশ্যে। আর এই উদ্দেশ্য যদি হয় প্রতিবেশী রাজ্য তাহলে আর ভাবনার তো প্রশ্নই নেই! ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলায় ঠাকুরানী পাহাড়ের কোলে অবস্থিত ছোট্ট একটি অফবিট জায়গা বাংরিপোসি। কলকাতা থেকে মাত্র ২২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জনপদ।
বৃষ্টির দিনে দু’এক দিন ছুটি কাটানোর আদর্শ একটি জায়গা হল এই বাংরিপোসি। নদী, পাহাড়, জঙ্গল এবং সর্বোপরি আদিবাসীদের নিয়ে শান্ত স্নিগ্ধ মায়াময় পরিবেশের ডালি নিয়ে হাজির এই অঞ্চলটি। এখানে মূলত সাঁওতাল, ভিল, মুন্ডা, লোধা জনজাতির বাস। বিদ্যাভাণ্ডার, পাথরকুশি, অর্ধেশ্বর, বুড়াবুড়ির মতো বেশ কয়েকটি পাহাড়ের চূড়া আগলে রেখেছে ওড়িশার এই জনপদটিকে। তাছাড়া ক্ষেতের পর ক্ষেতে সবুজ ধান এবং সবথেকে আকর্ষণীয় খরস্রোতা বুড়িবালাম নদী– প্রকৃতি এখানে যেন এক অনন্য রূপে ধরা দেবে আপনার কাছে।
এছাড়া এখানে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে রয়েছে সুলেইপাত ড্যাম, বাঁকবল ড্যাম, বিসোই হাট, দুয়ারসিনির মন্দির। বাংরিপোসির কাছেই রয়েছে বহুপ্রাচীন সিমলেশ্বরী শিবমন্দির। মন্দির থেকে কিছুটা গেলেই বসে শনিবারের হাট। সেখান থেকে আবার কয়েক কিলোমিটার পথ হাঁটলে পৌঁছে যাবেন ডোকরা শিল্পের জন্য বিখ্যাত কুলিয়ানা গ্রাম। সেখান থেকে ১৩ কিমি দূরে রয়েছে কানচিন্ডা। শাল, সেগুন, মহুয়া, শিমুল, পলাশ গাছে ঘেরা এই জায়গাটিতে গেলে প্রকৃতিকে আরও কাছ থেকে পাওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। আর রয়েছে বুড়িবালামের শাখা নদী কালাবাঁধ– যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য না দেখলে বাংরিপোসি ঘোরাটা অসম্পূর্ণই রয়ে যায়।
রোড ট্রিপ ভালোবাসলে অনায়াসেই গাড়ি করে কলকাতা থেকে সড়কপথে পাড়ি দেওয়া যায় বাংরিপোসির উদ্দেশ্যে। না হলে হাওড়া থেকে প্রথমে ট্রেন পথে বালাসোর। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছে যান বাংরিপোসি। দূরত্ব ৯৫কিমি। বাংরিপোসিতে থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল, রিসোর্ট, হোম স্টে রয়েছে। থাকা-খাওয়া নিয়ে খরচ শুরু ১,২০০ টাকা থেকে। এই বর্ষায় দু’এক দিনের ছুটি পেলে কম খরচে একটু হাওয়া বদল করতে ঘুরে আসুন বাংরিপোসি।
Discussion about this post