বইয়ের মতো বিস্ময়কর বস্তু এ পৃথিবীতে খুব কমই আছে। পাতা খুললেই বেরিয়ে পড়ে গল্প, কবিতা, উপাখ্যান। তথ্য, অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, প্রজ্ঞা। পার্থিব সম্পদ ধ্বংস হলেও বই থেকে অর্জিত জ্ঞান সম্পদ হয়ে রয়ে যায় সারাজীবন। এই বইয়ের দৌলতেই এক ছুটে পৌছনো যায় নিশ্চিন্দিপুর, ধরা যায় অপু-দুর্গাকে বা রতন-পোস্টমাস্টারকে। বইয়ে ঠাসা তাক তাই অ্যালবামে সাজিয়ে রাখা ছবির মতোই আপন মনে হয়।
বইয়ের গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে অভিনব পথ দেখিয়েছে বাংলাদেশের কয়েকটি গ্রাম। ঈদ উৎসবে উপহার হিসেবে বই দেওয়া হয় সেখানকার শিশু-কিশোরদের। ঈদের উপহার হিসেবে ছোট বড় সবাই টাকা পেতে পছন্দ করে এটাই পুরাতন চিত্র। অন্য পথে হেঁটে ঈদের নতুন চিত্র আঁকছে বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার কাজীর গ্রাম। গত এগারো বছর ধরে এই গ্রামে শিশু, কিশোর, তরুণ, প্রবীণদের মাঝে ঈদ সালামী হিসেবে বই দিয়ে আসছে এই গ্রামের পাঠাগার ‘পড়াঘর’। এই ঘটনার সূত্রপাত ২০১০ সালে। প্রতিবছর এই কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে চলেছে এই পাঠাগারের উদ্যোক্তারা। ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানের উৎসাহে ভাটা আসেনি একটুও। বইকে ভালোবেসে, বইকে আপন করে নিতেই অভ্যস্ত হয়েছে গ্রামের শিশু-কিশোররা। এতেই বদলে যাচ্ছে গ্রামের ছবিটা। বইয়ের সহজলভ্যতা বাড়িয়ে দিচ্ছে বই পড়ার অভ্যেস। একই সাথে এই ক্ষুদে ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে পড়াশোনা করার ইচ্ছেও।
আরেকটি সমসাময়িক নাম চাদপুর সদর উপজেলার ইসলামপুর গাছতলা গ্রাম। স্থানীয় ‘আব্দুর রহমান জাগী’ পাঠাগারের উদ্যোগে ঈদ উপলক্ষে বই প্রাপ্তি হয় সেখানকার শিশু শিক্ষার্থীদের। উপহার দেওয়া বইয়ের মধ্যে থাকে ছড়া, কবিতা, গল্প, এমনকি মুক্তিযুদ্ধের কাহিনীও। ছোটবেলায় উৎসবে, অনুষ্ঠান, প্রতিযোগিতার পুরস্কার হিসেবে বই প্রাপ্তির আনন্দ প্রতিযোগিতা জেতার আনন্দের মতোই সুখকর মনে হত। পুজো বা জন্মদিন উপলক্ষ্যে পরবর্তী কোন বই পাওয়া যেতে পারে তা নিয়ে ভাইবোনদের মধ্যে চলতো বিস্তর গবেষণা। উৎসবের সাথে বইয়ের সংযোগ বাঙালির জীবনে এভাবেই নিবিড় হয়েছে। বর্তমানে দ্রুত পরিবর্তনশীল সময়ে বই পড়ার অভ্যেসে টান পড়ছে ঠিকই। তবে নতুন প্রযুক্তি আর পুরনো অভ্যেসকে একে অপরের বিপরীতমুখী না হতে দেওয়াই কাম্য। ডিজিটাল পৃথিবীর পাশাপাশি যদি সঙ্গে রাখা যায় বাঁধাই করা জ্যান্ত বইয়ের দুনিয়া, তবে সদা ব্যস্ত জীবনে অপু -দুর্গার গল্পগুলো হাত ছাড়া হবে না একথা জোর দিয়ে বলা যায়।
Discussion about this post