নিজের প্রতি সুবিচারের আশায় শেষমেশ পথে নামলেন বাংলাদেশী মহিলা সাংবাদিক। স্বামীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন আগেই। কিন্তু এতদিনেও কোনও বিচার না পেয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় এসে দাঁড়ালেন সাজিদা ইসলাম পারুল। পেশায় বাংলাদেশের ‘দৈনিক সমকাল’-এর স্টাফ করেসপন্ডেন্ট তিনি। বেশ কয়েক মাস আগেই যৌতুকের দাবির সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং কন্যা ভ্রূণ হত্যা, এই অভিযোগে স্বামী রেজাউল করিম প্লাবনের বিরুদ্ধে মামলা দাখিল করেন পারুল। বাংলাদেশের হাতির ঝিল থানায় করা সেই মামলার পর কেটে গিয়েছে ৪৫ দিন। গ্রেফতার করা হয়নি অভিযুক্ত প্লাবনকে। তাই বাধ্য হয়েই প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুবিচার চেয়ে রাস্তায় নামলেন পারুল।
গত বুধবার বাংলাদেশের জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে দেখা যায় পারুলকে। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি কি বিচার পাবো না?/ যৌতুকের দাবি, নির্যাতন ও ভ্রূণ হত্যাকারী প্লাবনের গ্রেফতার চাই।” স্বামীর অন্যায়ের অভিযোগের পাশাপাশি তিনি এও বলেন, তাকে সমঝোতার জন্য নানারকম হুমকিও নাকি দেওয়া হচ্ছে। বেশ কিছু সাংবাদিক-নেতার প্রশ্রয়ে এবং পুলিশ প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে প্লাবন তাঁকে হুমকি দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে তাঁর ফেসবুকও হ্যাকের আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। এমনটাই অভিযোগ তাঁর। এর আগে বঞ্চিত, নির্যাতিতা মহিলাদের নিয়ে এই সাংবাদিক লিখেছিলেন অসংখ্য প্রতিবেদন। আজ নিজের অধিকারের জন্য তাঁকেই পথে নামতে হল।
অভিযোগ সত্ত্বেও প্লাবনকে কেন ধরা যাচ্ছে না? এই বিষয়ে হাতির ঝিল থানার ওসি আবদুর রশিদকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। তিনি জানান, প্লাবনকে গ্রেফতারের জন্য তারা যথেষ্টই চেষ্টা করে চলেছেন। এমনকি তিন সদস্যের একটি দলও নাকি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এই মূহুর্তে প্লাবনকে কিছুতেই ধরা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে এ দাবীকে হেলায় উড়িয়ে দিয়েছেন পারুল। তাঁর কথায় ইতিমধ্যে বিচার চেয়ে বিভিন্ন জায়গায় ধর্নাও দিয়েছেন তিনি। অথচ প্লাবন ঢাকা শহরে থাকা সত্ত্বেও পুলিশ নাকি তাকে খুঁজে পাচ্ছে না! এই প্রসঙ্গে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ বলেন, পারুল প্রেস ক্লাবে যাবে তা তিনি জানতেন না। যদি জানতেন তবে একজন সাংবাদিক হিসেবে পারুলের পাশে দাঁড়াতেন তিনি। রফিকুল ইসলাম এও বলেন, প্লাবনের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও ভ্রূণ হত্যার অভিযোগের পরই তার ডিআরইউর সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। তিন সদস্যের একটি শৃঙ্খলা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গেই খতিয়ে দেখছেন তারা। এমনকি শৃঙ্খলা কমিটির তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্লাবনের সদস্য পদও বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে পারুল পাশে পেয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহ-সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা এবং দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফিকে। পারুলের পাশাপাশি ন্যায় বিচারের জন্য দিন গুনছেন তাঁরাও। গতকাল প্রেস ক্লাবে দাঁড়ানোর পর প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে কোনও ইতিবাচক সংবাদ না পেলে এরপর হাতির ঝিল থানার সামনেও ধর্ণাতে বসবেন পারুল। প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসস্থানের সামনেও গিয়ে দাঁড়াবেন বলে জানান তিনি। পারুল প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশের নামকরা একজন সাংবাদিক হওয়া সত্ত্বেও বিচারের দাবীতে এভাবে রাস্তায় এসে দাঁড়াতে হচ্ছে তাঁকে। তাহলে বাংলাদেশের সাধারণ মহিলারা কি আদৌ তাদের ন্যায় বিচার পায় কোনওদিন? পেলেও ঠিক কত দিনে? প্রশ্নটা শুধু পারুলের নয়, প্রশ্নটা আজ হয়ত সারা দেশবাসীরই!
Discussion about this post