দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। সীমান্তের ভোগান্তি পেরিয়ে সস্তায় ভালো কেনাকাটা সারতে প্রতিদিন প্রায় কুড়ি হাজার বাংলাদেশি নাগরিক কলকাতায় আসছেন। রমজান মাসের শেষের দিকে সংখ্যাটা পৌঁছে যায় প্রায় লাখের কাছাকাছি। শহরে পা রেখেই উঠছেন মধ্য কলকাতার হোটেলে। এই সুযোগে রুমের ভাড়া দ্বিগুণ বা আকাশছোঁয়া। উপায় নেই, তাই সব কিছু উপেক্ষা করেই চলছে ঈদের কেনাকাটা।
বৃষ্টি নেই, প্রচন্ড গরম। তাতেও ইফতার শেষে সন্ধ্যায় ভিড়ে ঠাসা নিউ মার্কেট এলাকা। মূলতঃ নাগালের মধ্যে থাকা দাম, পোশাক বৈচিত্র, জিনিসের গুণগত মান বাংলাদেশি পর্যটকদের এখানে টেনে আনে বারবার। এই জায়গাকে ঘিরে থাকা মার্কুইস স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদওয়াই রোডের হোটেল পাড়া ভর্তি কানা অবধি ভিড়ে। কোথাও একটা রুম পেতে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত বখশিসও। ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদের পাশেই পাওয়া যায় টুপি, আতর, কুর্তা, জায়নামাজ। নিউ মার্কেট এলাকা এই সময় যেন আরবের মেক্কা। আরেকটু এগিয়ে গেলে জাকারিয়া স্ট্রিটের নাখোদা মসজিদ সংলগ্ন এলাকা ও বড়বাজার কলকাতার বিশাল পাইকারি বাজারের অন্যতম দুই নাম। পোশাক, সুরমা, আতর, সেমুইয়ে সাজানো দোকান। সবখানেই বাংলাদেশী মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো।
হোটেল রুমের সাথে পাল্লা দিয়ে ভিড় জমছে খাবারের দোকান, রেস্তোরাতে। ঈদকে সামনে রেখে বর্ণিল সাজে সেজেছে মার্কেট থেকে দোকান। কিছু দোকানের দরজায় টাঙানো ‘ঈদ মোবারক’ তোরণ দেখে জায়গার ভৌগোলিক অবস্থান বিষয়ে ক্ষণিকের সন্দেহ জাগতে পারে! ঈদের বাজার সারতে বাংলাদেশি নাগরিকদের সাথে সামিল পশ্চিম বাংলার মুসলিম মানুষও। ঈদকে উপলক্ষ করে এই জনমিছিল ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে সারা পশ্চিম বাংলা জুড়ে।
বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে কলকাতা শহর একটা আলাদা আকর্ষণ। নিউ মার্কেটের জনপ্রিয়তার কারণে বেড়েছে আসা যাওয়া। বাংলাদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে এখানকার বিক্রেতাদের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। কেনাকাটা না থাকলেও দেখা করে যাওয়া এখানে বার্ষিক রীতির কাছাকাছি। দেশের সীমানা পেরিয়ে এসে এমন কুশল বিনিময় না দেখলে বিশ্বাস হবে না। কাঁটাতার পার করে ঈদের উৎসব ও আনন্দ প্রতিবার এভাবেই মিলিয়ে দেয় এই মানুষগুলোকে।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – সমকাল
Discussion about this post