গুড়ের স্বাদ বাঙালির কাছে মধুর সমান। সোনালি রঙের পাতলা গুড়, আহা তার যা স্বাদ আর গন্ধ! এর জন্য শহীদও পর্যন্ত হতে পারে বাঙালি। দেশে যুগ যুগ ধরে বাঙালির রসনায় খেজুর গুড় প্রাধান্য পেয়ে আসছে। তাই তো নানান রকমের পিঠে-পুলি তৈরিতে রাজশাহীর খেজুর গুড়ের জুড়ি নেই। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার সিংগাহাট, কানপাড়াহাট, পুঠিয়ার বানেশ্বর, চারঘাট এবং পবা উপজেলাসহ নগরীর মোকামগুলোয় গুড় বিক্রি করা হয়। প্রতি বছরের মতো এ বছরও তীব্র শীত উপেক্ষা করে রাজশাহীর হাটগুলোয় জমে উঠেছিল জমজমাট খেজুর গুড়ের ব্যবসা।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরের খেজুর গুড়ের হাট বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী হাট। প্রতি বছর শীতকালে এই হাটে সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খেজুর গুড় বিক্রির জন্য আসেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এই হাটে পাটালি, নলেন, ঝোলাসহ বিভিন্ন ধরনের খেজুর গুড় বিক্রি হয়। বানেশ্বরের খেজুর গুড়ের হাটের ইতিহাস বেশ পুরনো। উনিশ শতকের প্রথম দিকে এই হাটের সূচনা হয়। তখন থেকেই এই হাটটি দেশের অন্যতম প্রধান খেজুর গুড়ের হাট হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এই হাটটি বসে রাজশাহীর বানেশ্বর উপজেলার ভূমি অফিসের মাঠে, সপ্তাহে দু’দিন মঙ্গলবার ও শনিবার। এই সময়ের মধ্যে হাটে প্রায় ৫০০ থেকে ১০০০ মেট্রিক টন খেজুর গুড় বিক্রি হয়।
এই হাটের বেশিরভাগ বিক্রেতারা আসেন দুর্গাপুর, বাঘা, পুঠিয়া ও চারঘাট উপজেলা থেকে। তাদের মধ্যে কেউ নিজেরাই গাছ থেকে রস নামিয়ে খেজুর গুড় তৈরি করেন। আবার কেউ কেউ অন্যের খেজুর গাছ ইজারা নিয়ে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করেন। এই হাটে প্রতিদিন বিক্রি হয় ৫০০ মণ গুড়। এবার খেজুর গুড় ও পাটালি ১১০ থেকে ১৫০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা গুড় তৈরিতে ব্যবহার করেন চিনি। ফলে সঠিক মানের গুড় পান না ক্রেতারা। তবে বর্তমানে প্রশাসনের নজরদারির ফলে ভেজাল গুড়ের উৎপাদন অনেকটাই কমেছে।
বানেশ্বর হাটের পাইকারি গুড়ের আড়ত ‘কাজীর হাট ট্রেডার্স’-এর মালিক সাইফুল ইসলামের থেকে জানা যায়, সপ্তাহের দুদিন এই হাটে প্রায় ২২ থেকে ২৫ লক্ষ টাকার গুড় বেচাকেনা হয়। এই গুড় দেশের চাহিদা মিটিয়ে কানাডা, লন্ডন, আমেরিকা, সৌদি আরবসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশেও যায়। বানেশ্বরের খেজুর গুড়ের হাটটি শুধুমাত্র ব্যবসায়িক নয়, এটি একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলনমেলাও বটে।
Discussion about this post