শাসক বদলায়, ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন হয়, জুড়ে যায় ইতিহাসের পাতায় রঙ পাল্টানো নানা ঘটনাবলি। অপরিবর্তিত থাকে শুধুই বঞ্চিত ও শোষিতের ইতিহাস যাদের দৌলতে সভ্যতার চাকা ঘুরতে থাকে আর সেই চাকার তলায় পিষে মরে মেহনতি মজদুরদের আজ ও আগামী। এমনই দুর্ভাগ্যের কালো অতীত ও আজ নিয়ে স্বপ্নলুঠ চোখে আগামীর দিকে শূন্য দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে উত্তরবঙ্গের অভাগা চা শিল্পের শ্রমিকরা। তাদের শোষণ ও বঞ্চনার অবিরাম গল্প সভ্যতার সামনে এঁকে যায় চরম লজ্জার প্রশ্নচিহ্ন।
বিনা নোটিসে বন্ধ হয়ে গেল বানারহাট চা বাগান। গত মঙ্গলবার সকালে পেটের ভাত জোগাড়ের জন্য শ্রমিকরা এসে দেখেন ফ্যাক্টরির গেটে ঝুলছে তালা। তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে হতাশ শ্রমিক মহলে। চা বাগানের কর্তৃপক্ষ রাতারাতি পাততাড়ি গুটিয়ে পলাতক। প্রসঙ্গত উল্লেখ করার দরকার, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বানারহাট চা বাগান গত বছর জুন মাসে আশার সঞ্চার করে খোলে। তবে শ্রমিক ও কর্মীদের ক্ষোভ বাড়তে থাকে বাগান কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীন পরিচালনার বিরুদ্ধে। শ্রমিকদের নিয়মিত পারিশ্রমিক ও কর্মীদের এক বছর ধরে বেতন না দেওয়ার ফলে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছিল গত বছর। বানারহাট চা বাগানের শ্রমিক ও কর্মীরা আন্দোলন ও থানা ঘেরাও কর্মসূচিও পালন করেন গত নভেম্বরে। কর্তৃপক্ষের দিক থেকে সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হলেও শেষমেশ আজকের এই দিনটি দেখতে হলো এক প্রকার প্রতারিত শ্রমিক ও কর্মীদের।
স্বভাবতই হতাশার অন্ধকার নেমে এসেছে শ্রমিক মহলে। চা বাগানের মতো রুগ্ন শিল্পকে নিয়ে রাজনীতি কম হয়নি। ভোট ব্যাংকের খাতিরে শাসক থেকে বিরোধী চরম দারিদ্রতাকে বয়ে নিয়ে চলা প্রান্তিক মানুষদের দিয়ে গেছেন শুধু আশ্বাস। বুদ্ধিজীবীদের টেবিলে তর্ক বিতর্কের সঙ্গে চায়ের তুফান উঠেছে দেখার মতো। কিন্তু বানারহাট চা বাগানের মতো অসংখ্য ধুঁকতে থাকা চা শিল্পের রুগ্নদশা বজায় রয়েছে ব্রিটিশদের আমল থেকেই। ‘শাইনিং ইন্ডিয়ার’ জন্য অবশ্য বানারহাটের মতো ঘটনা যে চোখে পড়ার মতো কুৎসিত ব্যানার, তা বলাই বাহুল্য।
Discussion about this post