২০২০ এ যাত্রা শুরু। টিউশনের বেতন জমিয়ে শখের বশে কেক বানানো। ইউটিউবের ভিডিও, কিছু টেলিভিশন শো এইসব দেখেই ওই টুকটাক যা কিছু শেখা। বোনের জন্মদিনে কেক বানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট। ব্যাস, সঙ্গে সঙ্গে লাইক, কমেন্ট আর শেয়ার। হাতের ক্যারিশমায় মুগ্ধ নেটিজেন। তারপর নিজের ইচ্ছের উপর ভর করে আর বাড়ির লোকের উৎসাহে কেক বানানোর যাত্রা শুরু স্নেহার।

স্নেহা সাহা, বালুরঘাটের বাসিন্দা। স্কুল জীবনে রঙ বেরঙের কেকের প্রতি আকর্ষণ স্বাভাবিক। তখন থেকেই টুকটাক কেক বানানোয় হাতে খড়ি। তারপর স্কুল পেরিয়ে কলেজ। পড়াশোনার পাশাপাশি অবসরে রান্না। বিশেষ করে কেক, পেস্ট্রি, কুকিজ। বেকারি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো একপ্রকার শখে পরিণত হয়। কিন্তু নিজের শখ মেটাতে স্নেহার যা কিছু খরচ হয়েছিল তার পুরোটাই এসেছিল নিজের উপার্জন থেকে। বাড়ির লোকের উৎসাহ ছিল অবশ্যই, কিন্তু মেয়ে চেয়েছিল নিজের শখ সে নিজের উপার্জিত টাকা থেকেই পূরণ করবে। কলেজে পড়াকালীন টিউশন পড়াত ছোটদের। সেখান থেকেই জোগাড় হয় কেক বানানোর প্রয়োজনীয় অর্থ। ইন্টারনেট এক্ষেত্রে বড়ো ভরসা ছিল। ইউটিউবের ভিডিও দেখে ওই টুকটাক এক্সপেরিমেন্ট করতে করতে পথ চলা শুরু।

কো-১৯ এর গ্রাসে দুনিয়া জুড়ে বিপদ। বড্ড গোলমেলে সময়ে পথ চলা শুরু হলেও মানুষের উৎসাহে, প্রেরণায় পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বোনের জন্মদিন থেকে মা বাবার বিবাহ বার্ষিকী, বাড়ির যে কোনো অনুষ্ঠানে স্নেহার বানানো কেক যেন আবশ্যিক। তারপর সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেই বাইরের লোকও আগ্রহী হয় কিনতে। তারপর জন্মদিন থেকে বিয়ে বাড়ি, স্নেহার হাতের ক্যারিশমায় মুগ্ধ ক্রেতা মহল। নিয়মিত খদ্দেররা তো বটেই, তার নতুন নতুন রঙবাহারি কেক দেখে লোভ সামলানো বাকিদের পক্ষেও একটু মুশকিল। এক বছরের মধ্যে নিছকই শখের বশে যে যাত্রা শুরু সেখান থেকে পেশাদার কেক নির্মাতা। বেকারির দোকান এখনো তৈরী হয়নি ঠিকই, কিন্তু ক্রেতামহলে ভিড় বাড়ছে এখন থেকেই। তবে স্নেহার মতে, ইদানিং খদ্দেরদের মাঝে থিম কেকের চাহিদা বাড়ছে।

উপরন্তু ডিসেম্বর মাস। বড়দিনের মরসুমে কেক-পেস্ট্রির প্রাসঙ্গিকতা এড়ানো অসম্ভব। তাই এখন খদ্দেরদের চাহিদাও বাড়ছে ধীরে ধীরে। ফ্রুট কেক থেকে ক্রিম কেক, তিনশো থেকে তিন হাজার সব ধরনের কেকের অর্ডার নিজে হাতে সামলাতে হয় তাঁকে। তবে কোনোকিছুই তো অসম্ভব নয়। ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। স্নেহার অদম্য ইচ্ছে আর চেষ্টা এক্ষেত্রে বাস্তব উদাহরণ। সাধারণ মেয়ের এক ‘অ’-সাধারণ গল্প’। নিতান্তই শখের বশে কেক বানানো থেকে অল্প সময়ে কেকের সফল ব্যবসায়ী হওয়া। মোটেই ‘সাধারণ’ নয়!
Discussion about this post