ছবি প্রতীকী
সেই পুরনো দিন থেকেই জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো মানেই কামান দেগে দেবীর আরাধনা শুরু। অষ্টমীতে ঢাকের বাদ্যি তো ছিলই! সাথে কামানের গর্জনও রেওয়াজের একটা অংশ হয়ে উঠেছিল। এখন আর না আছে রাজ – রাজা, আর না আছে জমিদার। কিন্তু পুজোগুলো রয়ে গেছে আজও। ভক্তি, নিষ্ঠা আর ঐতিহ্যের আকর্ষণে এখনও জনমানসে আলোড়ন তোলে এই পুজোগুলো। ঐতিহ্যবাহী তেমনিই এক পুজো হল হাওড়ার বাগনানের নন্দী বাড়ির পুজো।
বাগনানের রথতলা এলাকায় বাস নন্দী পরিবারের। এই পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল হুগলির শিয়াখালার পাতুল গ্রাম। এই গ্রামেই শুরু হয়েছিল নন্দী পরিবারের বিখ্যাত দুর্গাপুজো। সেখান থেকে পরে তারা বাগনানে চলে আসে। আর এখানেই পরিবারের ধারা বজায় রেখে পুজো চলতে থাকে বছরের পর বছর। ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের মেলবন্ধনে পুজোর আয়োজন। আবার সেখানে একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্মৃতিও জড়িয়ে রয়েছে এ বাড়ির পুজোকে কেন্দ্র করে। এই বাড়ির পুজোতেই এসেছিলেন বীর বিপ্লবী বাঘা যতীন।
তিনি দীর্ঘদিন বাগনানে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। বাগনান হাইস্কুলে তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা ঘাঁটি গেড়েছিলেন। তারপরই বালেশ্বরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। আমরা সকলেই জানি সেখানে বুড়ি বালাম নদীর তীরে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বীর দর্পে যুদ্ধ করেছিলেন তিনি। ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বল করছে এই কাহিনী। তবে তাঁর আগেই তিনি নন্দী বাড়ির দুর্গাপুজোয় হাজির হয়ে আশীর্বাদ নিয়ে গিয়েছিলেন দনুজদলনীর। তাই স্বাধীনতা সংগ্রামীর এই স্মৃতি এক অন্য মাত্রা দিয়েছে এ বাড়ির পুজোকে।
এখনও এ বাড়ির পুজোয় রীতি মেনে পুজোর আয়োজন হয়। প্রথা ছিল কামান দাগার আওয়াজ শুনে শুরু হত অষ্টমী-নবমীর সন্ধিক্ষণের পুজো। সেইমতো সন্ধিপুজো শুরুর মুহূর্তে এখন কামানের বদলে বাড়ির বন্দুক থেকে ফায়ারিং করা হয়। দুটি ফায়ারিং হয়। এ অভিজাত রীতি আজও বর্তমান। পরিবারের রীতি মেনে এখনও কুমারী পুজো ও ছাগ বলি হয়। দুর্গা মন্দিরে জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজনও হয় চিরাচরিত প্রথা মেনে। এলাকায় যথেষ্ট সমাদৃত এ বাড়ি। আরও সমাদৃত ঐতিহ্যের ধারা আজও বজায় রাখায়।
Discussion about this post