পুরানো কলকাতার ইতিহাসের পাতায় রেল গাড়ি চালু হওয়া নিয়ে বেশ আকর্ষণীয় কথা উঠে আসে। আসলে আমাদের শহরটা শুধু একটা রাজ্যের রাজধানী নয়। একটা ইতিহাসের বইও বটে। যে বইতে প্রতি পাতায় নানা ঘটনার বাহুল্য খুঁজে পাওয়া যায়। ভারতবর্ষে প্রথম রেল গাড়ি চলেছিল বোম্বেতে মাত্র একুশ মাইল ১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল। এরপর কলকাতায় রেল গাড়ি চালুর প্রস্তাবনা আসে রাণী ভিক্টোরিয়ার জন্মদিন ১৮৫৪ সালের ১৭ মে। যদিও তা পিছিয়ে ১৫ আগস্ট চালু হয়। সেই সময়ের বিশিষ্ট সংবাদ পত্রিকা সংবাদ ভাস্করেও রেল নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ পায়।এই রেল চালানোর দায়িত্ব ছিল ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে বা ইআইআর কোম্পানির অধীনে। এই কোম্পানির প্রথম অধিকর্তা ছিলেন আর ম্যাকডোনাল্ড স্টিফেনশন।
রেল চালু হওয়ার পর কলকাতার মানুষ জনকে জানানো হলে তার অগ্রিম টাকা দিয়ে সিট রিজার্ভের আবেদন করে। প্রায় তিন হাজার আবেদন পত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে কয়েকশো যাত্রী সুযোগ পেয়েছিল। প্রথম ট্রেনটায় ছিল তিনটে ফার্স্ট ক্লাস কম্পার্টমেন্ট, দুটো সেকেন্ড ক্লাস কম্পার্টমেন্ট আর তিনটে থার্ড ক্লাস কম্পার্টমেন্ট। তৃতীয় শ্রেণীয় ছাদের উপরে ঢাকা ছিল না। প্রথম আর দ্বিতীয় শ্রেণীর কম্পার্টমেন্টে ছিল গদি। আর প্রথম রেল হাওড়া থেকে ছাড়ে সকাল সাড়ে আটটায়। বালি এগারো মিনিট পর গিয়ে পৌঁছায়। দশটায় পৌঁছায় হুগলীতে।
প্রথম দিন হাজারে হাজারে নর নারী রেল স্টেশনের চার ধারে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রেল গাড়ি চলতে দেখে। কেউ কেউ আবেগে ভাব প্রবণ হয়ে গল বস্ত্র হয়ে রেল গাড়িকে প্রণামও করে। অনেকে আবার ভয়ে গাড়ি চড়েও নি । অনেকেরই ধারণা ছিল রেল গাড়ি চাপলে আর বেঁচে ফেরা যাবে না। তাই কেউ কেউ তিথি পঞ্জিকা নক্ষত্র এই সব দেখে রেলে চাপত। যারা রেল গাড়ি দেখেছে তারা বাকি যারা রেল গাড়ি দেখেনি তাদেরকে মজার এক গল্প বলত। গাড়ির সামনে কালো জিনিসে এক দৈত্য আছে! আগুনের খোঁচা খেয়ে মাঝে মাঝে বিকট চিৎকার করে ওঠে আর ছুটতে থাকে। প্রথম রেল গাড়ি চালু হওয়ার পর এমন বহু মজার গল্প ছড়িয়ে পড়লেও কলকাতার জনজীবনে রেলের জনপ্রিয়তা কিন্তু বাড়তেই থাকে। রীতিমতো কালীঘাট থেকে ফলতা পর্যন্ত লাইন চালু হয় ১৯১৭ সালে। ধীরে ধীরে কলকাতার প্রাত্যহিক জীবনে রেল অপরিহার্য হয়ে ওঠে। আজকের দিনে রেল গাড়ি আমাদের জীবনে সময় বাঁচিয়ে এক আর্শীবাদ হয়ে রয়েছে আমাদের জন মানসে।
Discussion about this post