ইংরেজি ভাষায় বহুদিন ধরেই একটি প্রবাদ চালু রয়েছে, ‘Death as dodo’। সোজা বাংলায় যার অর্থ হল, মুখ্যুর মতো মৃত্যুবরণ করা। প্রবাদটির উৎস জানতে হলে আমাদের পাড়ি দিতে হবে পাঁচটি শতক আগে। মরিশাস দ্বীপে তখন বেশ সুখে শান্তিতেই বাস করত গোলগাল, শান্তশিষ্ট ডোডো পাখির দল। কিন্তু এই সুখের দিন সমাগত হয় ১৫০৭ সালে, যখন মনুষ্যবসতিহীন মরিশাসে নোঙর ভিড়িয়েছিল ওলন্দাজ নাবিকের একটি দল। দ্বীপে পা রেখেই তাদের চোখে পড়ে থপথপিয়ে ঘুরে বেড়ানো এই মোটাসোটা পাখিরা। মরিশাস দ্বীপের ঢালাও খাবার এবং নির্ঝঞ্ঝাট জীবনের মাঝে জীবন সংগ্রামের সহজ পাঠই নেওয়া হয়নি বেচারা ডোডোদের। সে কারণেই এদের চেহারা ছিল থলথলে। ডানাগুলি হয়ে উঠেছিল ওড়ার অনুপোযোগী এবং বুদ্ধিবৃত্তিও ছিল তথৈবচ। সর্বগ্রাসী মানুষ হাতের নাগালে এমন শিকার পেলে কখনো কি ছাড়তে পারে? তাই খুন হত ডোডো পাখিরা। মরিশাস দ্বীপে মানুষের ভিড় বাড়ার সাথে তাই পাল্লা দিয়ে কমতে লাগল ডোডোদের সংখ্যা।
এভাবেই ১৬৮১ সালের মধ্যেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় পৃথিবীর শেষতম ডোডোটি। দীর্ঘ গবেষণার পরে দেখা গেছে, ডোডোর পূর্বপুরুষ পায়রা বা ঘুঘুদেরই সমগোত্রীয় একটি পাখি। কিন্তু চারশো বছর আগে বিদায় নেওয়া এই ডোডোপাখিরা আবারও কি ফিরে আসতে পারে? শুনতে অবাক লাগলেও বিজ্ঞান বলছে, হ্যাঁ পারে। সম্প্রতি এমনটাই দাবি করেছেন, কলোসেল বায়োসায়েন্স নামে একটি বায়োইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা। সংস্থাটির এই মুহূর্তে পাখির চোখ হল, জীবাশ্মের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যেমে বহু বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীদের ফিরিয়ে আনা। প্রথম প্রজেক্টে তাদের লক্ষ্য, উলি ম্যামথ, তাসমানিয়ান টাইগার এবং ডোডোদের ফিরিয়ে আনা।
ইতিমধ্যেই, কলোসেলের বিজ্ঞানীরা জিন এডিটিং টেকনোলজির মাধ্যমে ডোডোর ডিএনএ থেকে জিনোম সংগ্রহ করেছেন। এক্ষেত্রে, তাঁরা ডোডোর নিকট আত্মীয় নিকোবর পিজিয়নদের প্রাচীন জিনেরও সাহায্য নিচ্ছেন। এবার পরবর্তী ধাপগুলিতে তারা কতদূর এগোতে পারেন সেটুকুই দেখার। বিলুপ্ত প্রাণীদের ফিরিয়ে আনার এহেন পরিকল্পনা জীববিজ্ঞানীদের একাংশের বহুদিনের। সম্প্রতি পনেরো কোটি ডলার বিনিয়োগ হওয়ায় অবশেষে সেই পরিকল্পনা হালে পানি পেয়েছে। কলোসাস বায়ো-সায়েন্সেসের প্রকল্পটি যদি সত্যিই সফল হয় তাহলে তা নিঃসন্দেহে জেনেটিক্স সংক্রান্ত গবেষণায় একটি সুদূরপ্রসারী দরজা খুলে দেবে।
Discussion about this post