গানের কথায়, “দেখ মন, কাশ বন দুলছে যে সারি, কবে ঢাক, দেবে ডাক দিন গুনছে যে তারই।” হ্যাঁ শহরবাসী দিন গুনছে মায়ের আসার। শহর এখন ব্যস্ততায় মগ্ন পাঁচদিনের পরিকল্পনায়। ঠাকুর দেখা থেকে কেনাকাটা সবকিছুই চলছে জোর কদমে। কলকাতার সাথে জেলার পুজোও কিন্তু পিছিয়ে নেই। হাওড়ার মাকড়দহে যে কয়টি বনেদি বাড়িতে বহু বছর ধরে সাবেকিয়ানা ও ঐতিহ্যের সাথে দুর্গাপুজো চলে আসছে, সেগুলির মধ্যে প্রাচীনতম দুর্গা পুজো হল মাকড়দহ চৌধুরীপাড়ায় জমিদার জনার্দন চৌধুরীর বাড়ির পুজো। প্রায় ৫০০ বছর ধরে সাবেকিয়ানার বাহক এই পুজো। আন্দুল রাজবাড়ির জমিদার শ্রী জনার্দন চৌধুরীর নির্দেশে, তার জমিদারির কোষাধ্যক্ষের ব্যাপারে দেখভাল করার জন্য তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যরা মাকড়দহের বর্তমানের এই চৌধুরী বাড়িটিতে বসবাস শুরু করেন। জমিদার জনার্দন চৌধুরীর হাত ধরেই মাকড়দহের চৌধুরী বাড়িতে শুরু হয় দেবী আরাধনা।
ঢাকি থেকে মৃৎশিল্পী সকলেই কয়েক পুরুষ ধরে এই বাড়ির পুজোর সাথে যুক্ত। প্রতিটি বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোতেই কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য থাকে। মাকড়দহের চৌধুরী বাড়িও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানে শাক্ত মতে পুজো হয় মায়ের। মহালয়ার পর প্রতিপদ থেকে চৌধুরীদের ঠাকুরদালান সংলগ্ন চণ্ডীর ঘরে শুরু হয় মা চন্ডীর আরাধনা। চলে চণ্ডীপাঠ ও চন্ডীপুজাও।প্রথা মেনে সেই প্রাচীনকাল থেকে ঠাকুরদালানেই হয় মা দুর্গার প্রতিমা তৈরির কাজ। যদিও মায়ের চক্ষুদান করা হয় ষষ্ঠীর দিন। মায়ের মূর্তিতে রঙও করা হয় ওই দিন। ঠাকুরদালান সংলগ্ন বেলতলায় ওই দিনই বোধন হয় মায়ের। বাকি সবদিন ঘরোয়া প্রথা মেনে পুজো সম্পন্ন হয়। নবমীর দিন চৌধুরীপাড়া সংলগ্ন বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় হাজারেরও বেশি পরিবারকে পাত পেড়ে খাওয়ানোর প্রথাও চলে আসছে প্রাচীনকাল থেকেই।
তাহলে সাবেকিয়ানার আনন্দ পেতে যদি আসতেই হয় হাওড়ার মাকড়দহের এই প্রাচীন পুজোয়। আসবেন কীভাবে? হাওড়া স্টেশন থেকে ডোমজুড়গামী যে কোনও বাসে উঠে মাকড়দা বাস স্টপে নামার পর যে কোনও অটো বা টোটোকে চৌধুরী পাড়া দুর্গা দালান বললেই পৌঁছে যাবেন প্রায় পাঁচশো বছরের পুরনো এই জমিদার বাড়িতে।
Discussion about this post