বাঙালির মন খারাপের ওষুধ বোধহয় পাহাড়। দিন দিন চারদিকে বেড়ে চলেছে মন খারাপের গল্প। তার সাথেই বেড়ে চলেছে পাহাড় যাওয়ার ঝোঁক। প্রকৃতির বুকে খাম থেকে বেরিয়ে আসা চিঠির মত এক দুর্দান্ত জায়গার খোঁজ হিসেবে ‘কোলাখাম’। ছোট্ট একটা পাহাড়ি নিরিবিলি গ্রাম মনের সব শূন্যতা দূর করার জন্য যেন কোল পেতে আছে। ন্যাওড়া ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের ভেতর অবস্থিত এই গ্রাম উঁচু পাইন গাছে ঘেরা।
সবুজে ঘেরা এই গ্রামের মাটিতে সূর্যের আলো প্রায় পৌঁছোতে পারে না বললেই চলে। পাহাড়ি জঙ্গলে ঘেরা এ গ্রামের দূরত্ব লাভা থেকে মাত্র ৮ কিমি, আর কালিম্পং থেকে ৩৮ কিমি। কালিম্পং – এর ছোট্ট গ্রাম হচ্ছে কোলাখাম। কোলাখামে রাত্রিবাসের জন্য রয়েছে বিভিন্ন হোমস্টে। খাওয়া আর থাকা মিলিয়ে প্রতিদিন এবং প্রতিজন যার খরচ মাত্র ১২০০টাকা। জানলা খুললে দেখা মিলবে পাহাড়ের। সঙ্গে ফুরফুরে হিম শীতল হাওয়ায় ভেসে যাবে সব ক্লান্তি। আর দিগন্ত জুড়ে ছড়িয়ে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা যদি সৌভাগ্য হয় তো অবশ্যই দেখা মিলবে তার। ইজেলের ছবি সত্যি হয়ে ওঠার এক মনোরম দৃশ্য নিয়ে সব সময়ে প্রস্তুত কোলাখাম। ঘুরতে ঘুরতে যেতেই পারেন ছাঙ্গি ফলস। কিছুটা ট্রেক করেও যেতে পারেন।
পাহাড়ি এই জঙ্গলে বন্য প্রাণীর আনাগোনা দেখা যায় মাঝে মধ্যে। তাই পাহাড়ি এলাকায় সাবধান থাকতে হয় সবসময়। সেই সাথে জোঁকের উৎপাত থাকতেই পারে। ঘুরতে গিয়ে নুনকে সঙ্গী বানিয়েই চলতে হয় পাহাড়ি রাস্তায়। বিশেষ করে তা যদি হয় এমন গহন অরণ্য। তবুও এ পরিবেশ ছেড়ে যেতে যেন মন চায় না। এ এলাকায় কোনো স্কুল নেই। বাচ্চারা প্রায় ২ ঘন্টা হেঁটে পৌঁছায় স্কুলে। এটা ন্যাশনাল ফরেস্ট এরিয়া হওয়ায় এখানে ঢুকতে গাড়ি পিছু ১০০ টাকা নেয়। নির্জন এ গ্রামে মাত্র ১৫-২০টা বাড়ি। শহুরে জীবন ছেড়ে কোথাও ঝর্ণার আওয়াজ তো কোথাও ঝিঁ ঝিঁ’র ডাকে মন ভালো হবার সুর।
চারদিকে পাহাড়ি ফুলের সুবাস যেন আরও বেশি মন ভরিয়ে দেয়। এখনও পর্যন্ত এ জায়গাকে অফবিট বলা চলে। খুব বেশি মানুষের আনাগোনা নেই। হাওড়া – নিউ জলপাইগুড়ি ট্রেন ধরে যাত্রা শুরু করা যেতেই পারে কোলাখামের উদ্দেশ্যে। তিনদিনের জন্য ঘুরে আসার দারুণ এক ঠিকানা উত্তরবঙ্গের কোলাখাম। এ জায়গায় যাওয়ার পথে পড়বে রিশপ, তারপর হাতে সময় থাকলে কোলাখাম পেরিয়ে ঘুরে নিতে পারেন তাকদা, সিটং, রামধুরা ইত্যাদি জায়গাগুলো। প্রকৃতি কাউকে তার এ সৌন্দর্য্য থেকে বঞ্চিত করবে না।
Discussion about this post