হাজারো প্রতিকূলতার মাঝে দমে না গিয়ে বারংবার নিজের স্বপ্নগুলোর কাছে ফিরে আসার নামই বোধ হয় লড়াই। সঙ্গীতের জগতে তেমনই এক লড়াকু প্রতিভার নাম টম থ্রাস। মাত্র বারো বছর বয়সে প্রথম গান রচনা। সেখান থেকে শুধুমাত্র সঙ্গীতের জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার তাগিদে ছেড়েছিলেন ইংরেজিতে স্নাতক শিক্ষা। তারপর নানান চড়াই উতরাই পথ পেরিয়ে এ বছর মুক্তি পেয়েছে টম থ্রাসের মৌলিক গান ‘রাজপথ’ এবং এটি তার ‘অন্তিম অধ্যায়’ নামক অ্যালবামের প্রথম গান। তার নটি গানকে একসঙ্গে করে তৈরি এই অ্যালবামটি। এই অ্যালবামটিতে দর্শকদের তিনি উপহার দিয়েছেন আরএমবি, রক, পপ, র্যাপ জাতীয় গান। তবে তার জীবনের রাজপথটি মোটেই মসৃণ ছিল না। চলুন জেনে নিই এই শিল্পীর জার্নিটা।
২০১৪ সাল নাগাদ জ্যাক ফ্রস্ট নামে ব্যান্ড তৈরি করেছিলেন টম। ২০১৬ সালে বিশেষ কিছু কারণবশত ভেঙে পড়ে তার জ্যাক ফ্রস্ট ব্যান্ডটি। তিনিও লাইভ মিউজিক ছেড়ে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ার দিকে মনোযোগ দেন। এরপর ২০১৭ সালে নিজের একটি স্টুডিও খোলেন যার নাম ‘লিওটা স্টুডিও’। এরপর সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার ও রেকর্ডিস্ট হিসেবে শুরু হয় তার পথ চলা। ২০১৮ তে ‘Evolution pictures’ নামে একটি প্রোডাকশন কোম্পানিও লঞ্চ করেছিলেন তিনি। এরপর করোনাকালে লকডাউনের সময়ই ঘটল ছন্দপতন। সেইসময় তার স্টুডিও বন্ধ হয়ে গেল এবং পাশাপাশি প্রোডাকশন কোম্পানিও ভেঙ্গে পড়ল। ২০২২ সালে যখন টম থ্রাসের কামব্যাক করার পরিকল্পনা ঠিক তখনই এক বাইক দুর্ঘটনায় গোটা এক বছরের জন্য শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি মানসিক দিক থেকেও ভেঙ্গে পড়েন। কারণ সেইসময় ‘অন্তিম অধ্যায়’ এর কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া একেবারেই সম্ভব ছিল না তার পক্ষে। তবে বাড়িতে গানের সেট আপ থাকার কারণে সেইসময়টাতে তাকে আশাহত হতে দেয়নি তার গান।ওই যে কথায় আছে, রাখে হরি মারে কে। প্রায় পাঁচ বছরের বিরতির পর আবার তার মৌলিক গান রাজপথ নিয়ে টম আসছেন সঙ্গীত জগতে ইতিহাস তৈরি করতে।
টম থ্রাস আদতেই একজন অসাধারণ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তার ঝুলিতে রয়েছে প্রায় কুড়ি বছরের গান রচনা করার অভিজ্ঞতা। এছাড়া তিনি গিটার, উকুলেলে, ড্রামস, সিন্থেসাইজার সহ আরও অনেক বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পটু। ৭০-৮০ টা মত গান তিনি নানা ভাষায় রচনা করেছেন। বাংলায় একটি শক্তিশালী পপ সঙ্গীত কালচার প্রতিষ্ঠা করাই তার চেষ্টা। পছন্দ করেন বিভিন্ন ধরনের গিটার এবং সিন্থেসাইজারের মাধ্যমে নানান সুরকে নিয়ে পরীক্ষা করতে। তার বক্তব্য, “বাংলায় পপ কালচার এখনও ততটা সাফল্য অর্জন করেনি। আমি চাই আমার মত আরও অনেকে এগিয়ে আসুক বাংলায় পপ কালচারের একটা শক্ত ভিত প্রতিষ্ঠা করতে।” তিনি আরও বলেছেন যে আমাদের নতুন প্রজন্ম, যারা গান ভালোবাসে তারা যেন দৃঢ়মনস্ক এবং পেশা হিসেবে গানটাকে নিয়ে এগোয়। তিনি মনে করেন প্রত্যেকটা লিরিক্স একেকটা গল্প বলে, এটা কোনো বিভিন্ন ভাষার মিশ্রণ নয়। আগামী প্রজন্মকে এবিষয়ে উদ্বুদ্ধ করাটাই টম থ্রাসের একমাত্র প্রয়াস।
Discussion about this post