বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে কালী পুজোকে ঘিরে রয়েছে মানুষের বিশ্বাস এবং ভক্তি। পুজোর নিয়ম-কানুন, ইতিহাস-বর্তমান সবকিছুকে মিলিয়ে সেসব জায়গায় অলৌকিকতার স্পর্শ আজও ভীষণভাবে জাগ্রত। মা কালী সেখানে আর শুধু তন্ত্রের দেবী নন, তিনি যেন সাধারণের মা, রক্ষাকর্তা! এই যেমন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমন্ডি ব্লকের আমিনপুর গ্রামের মাটিয়া কালী। সেই গ্রামের অভিভাবকের আসনে দেবী স্বয়ং! গ্রামে শুভ কাজের পূর্বে তাঁর পুজো করা হয়নি এমন ঘটনা এখনো পর্যন্ত বিরল সেখানে। এই পুজো শুরু প্রায় ৫০০ বছর আগে। ‘মাটিয়া’ শব্দের মধ্যেই নিহিত রয়েছে তাঁর রূপের বর্ণনা। যে মাটির আসনে পুজো করা হয় তাঁকে সেই মাটিতেই মিলিয়ে যান তিনি। এখানে দেবীর কোনো প্রতিমা নেই। নেই কোনো পাকা মন্দির। তিনি এখানে মাটির বেদীতেই বিরাজমান। তবে কার্তিক মাসের দীপান্বিতা অমাবস্যায় তাঁর পুজোর সময় তৈরী করা হয় দেবী প্রতিমা।
পুজোর সূচনা গ্রামের জমিদার যোগেন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরীর আমলে। ইংরেজ আমলে হরিপুর এস্টেটের জমিদারির দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর। তিনিই একদিন দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। মা কালী তাঁকে নির্দেশ দেন, এই গ্রামের মাটিতেই মিশে আছেন তিনি । তাই তিনি এই খোলা আকাশের নীচে মাটির বেদীতেই পুজো নিতে চান। স্বপ্নাদেশ মতো আজও নির্মাণ করা হয়নি কোনো মন্দির। মাটির বেদীকেই মা কালী রূপে ৫০০ বছর ধরে পুজো করে আসছেন গ্রামের লোক। একবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মাটির বেদীর কিছু অংশ ক্ষয়ে গেলে গ্রাম বাসিন্দাদের উদ্যোগে পুনরায় গড়ে তোলা হয় সেই বেদী।
আরও পড়ুন শুধু তন্ত্র-মন্ত্রে নয়, আজও ভালোবেসে বুড়িমার পুজোয় সামিল হয় বালুরঘাট!
শোনা যায়, ইংরেজদের সাথে একবার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে জমিদার পরিবার। তবে যুদ্ধের পূর্বে তাঁরা মাটিয়া কালীকে রটন্তী কালীরূপে পুজো করেন এবং যুদ্ধে তাঁরা জয়ী হন। এছাড়াও গ্রামের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে মাটিয়া কালী পুজোকে ঘিরে অলৌকিকতার গল্প। তবে আজ জমিদার বংশের কেউ এই গ্রামে থাকেন না। গ্রামের মানুষরাই নিজেদের মতো করে পুজোর আয়োজন করে আসছেন। পুজোকে কেন্দ্র করে রীতিমতো ছোটোখাটো একটি মেলাও বসে আমিনপুর গ্রামে। আর মায়ের বেদীর কাছেই অবস্থিত পঞ্চমুখী শিবের মন্দির। গ্রামের বাইরেও প্রচুর মানুষ আসেন পুজোর দিন। আসলে মাটিয়া কালীকে ঘিরে মানুষের শ্রদ্ধা আর ভরসা এমনই! তিনি যে এই গাঁয়ের অধিষ্ঠাত্রী দেবী, তিনিই যে আসল কর্মকর্তা!
Discussion about this post