বিগত কয়েক দশক ধরে নগরায়নের নামে পুকুর বুজিয়ে, কৃষিজমি দখল করে, বনভূমি, পাহাড় ও নদী ধ্বংসের মাধ্যমে উন্নয়ন সাধন খুব সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঝাঁ চকচকে স্টেশন, বিশাল শপিং মল, বিনোদন কেন্দ্র, রাস্তা তৈরি হচ্ছে, আর প্রকৃতিকে দিতে হচ্ছে মূল্য। বিশ্ব উষ্ণায়নের কবলে পৃথিবী। আমেরিকার মত দেশের প্রধান আবার এই জলবায়ু পরিবর্তনকে সমস্যা বলে মানতেই রাজি নন। অথচ, প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারালেই, মানবজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। এর মধ্যেই আমাজন জঙ্গল সাফ করে সড়ক তৈরি করা হচ্ছে, যা ঘুম কেড়ে নিয়েছে পরিবেশ সচেতন মানুষের।
এ বছর নভেম্বর মাসে ব্রাজিলের বেলেমে জাতিসংঘের ৩০তম জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (COP30) অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এই সম্মেলনের জন্য আমাজনের একটি বিশাল অংশ উজাড় করে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। BBC-র প্রতিবেদন বলছে, সম্মেলনের আয়োজনের সুবিধার্থে চার লেন বিশিষ্ট একটি ‘Avenue of Liberty’ নামের মহাসড়ক তৈরি করা হচ্ছে, যার জন্য কয়েক হাজার একর বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে। সম্মেলনে ৫০ হাজার মানুষের সমাগম হবে, তাই ‘যানজট’ এড়াতে এই রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত। তবে পরিবেশবিদরা এই উদ্যোগকে তীব্র সমালোচনা করছেন। তাঁদের মতে, পরিবেশ রক্ষার নামে বন ধ্বংস! এটাই একটা ট্র্যাজেডি!
বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বনভূমিগুলোর মধ্যে আমাজন অন্যতম, যা ৯টি দেশের মধ্যে বিস্তৃত। ব্রাজিল, বলিভিয়া, কলোম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু, ভেনেজুয়েলা ইত্যাদি দেশের মধ্যে বিস্তৃত এই বনভূমির আয়তন প্রায় ৮২.৫ কোটি হেক্টর। কিন্তু ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে এর প্রায় ১৩ শতাংশ ধ্বংস হয়েছে, যা প্রায় ৯ কোটি হেক্টর বনভূমির সমান। কোকা চাষ, পশুপালন, অবৈধ খনন, কাঠ সংগ্রহ, নগরায়ণ, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এবং দাবানল প্রভৃতি এই আমাজনের ধ্বংসের জন্য দায়ী। বিশেষ করে ব্রাজিল, পেরু ও ইকুয়েডরে বন ধ্বংসের মূল কারণ হয়ে উঠেছে অবৈধ স্বর্ণখনন। নগর উন্নয়নের নামে কংক্রিটের রাস্তা তৈরি করায় নতুন করে বন গড়ে ওঠার সম্ভাবনা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
ব্রাজিল সরকার দাবি করেছে, এই মহাসড়ক দীর্ঘমেয়াদি সুফল দেবে এবং উন্নত নগরায়ণের পথ সুগম করবে। সড়কের ধারে বাইক লেন ও সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকবে এবং পশুদের চলাচলের জন্য বিশেষ জায়গা বরাদ্দ করা হবে। কিন্তু পরিবেশবিদরা মনে করছেন, বন উজাড়ের ফলে আমাজনের বাস্তুতন্ত্র ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্থানীয় বাসিন্দারাও জীবিকা হারাবেন। প্রাণীরা স্বাভাবিক আবাস হারাবে। এই বননিধন অব্যাহত থাকলে, পৃথিবীর ‘ফুসফুস’ বলে পরিচিত আমাজন অরণ্য ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
Discussion about this post