ধরুন ভর সন্ধেবেলা বাইরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে। একা থাকুন কি দোকা, মনটা তখন আপনার আনচান করবেই পেট পুজোর জন্য। আর এমন বর্ষা ভেজা আবহাওয়া মানেই ধোঁয়া ওঠা চা আর সঙ্গে গরমগরম চপ পেঁয়াজি। কী তাই তো! আজ্ঞে হ্যাঁ, খাদ্যরসিক বাঙালির কাছে জলখাবারের এই কম্বিনেশনটা যেন অমৃত। কিন্তু জানেন কি এই চপ পেঁয়াজি বেগুনির আগমন ঠিক কোত্থেকে! চলুন আজ তবে তেলেভাজার দুনিয়ায় একটু ডুব দেওয়া যাক।
চপকে আপনি বিদেশি ভাষায় পুরযুক্ত কাটলেট বলতেই পারেন। কিন্তু বাংলার এই অনবদ্য খাদ্যটি যে বর্তমানকে ভুলিয়ে দেওয়ারও ক্ষমতা রাখে সে বিষয়ে সবাই একমত। আর ভারতের মধ্যে সর্বপ্রথম চপের আবিষ্কার ঘটে মেদিনীপুরের ওই গ্রাম্য মাটিতেই। মেদিনীপুরের পাঁশকুড়াতেই প্রথম তৈরী হয় এই জনপ্রিয় পথখাদ্যটি। চপের মধ্যে কখনো ডিম কখনো মোচা কখনো চিংড়ি কখনো আবার ঢুকে বসে মাংসের কিমাও। তবে এসবের মধ্যে সবথেকে মুখরোচক হল আলুর চপ। মেদিনীপুরের এগলি ওগলি জুড়ে এই চপ গুমটির সংখ্যা নেহাতই কম নয়। তবে এর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে মেচেদা ও পাঁশকুড়ার আলুর চপ। ভোরের সেই লোকাল ট্রেন থেকে রাতের প্যাসেঞ্জার ট্রেনের সাক্ষী থাকে স্টেশনের ওই চপ মুড়ির দোকানগুলিই। আবার কখনো কখনো ট্রেনের কামরাতেও বেশ উঁচু গলার আওয়াজ কানে ঠেকে “গরম চ-অ-অ-প আছে বলুন।” আর শুধু আজকের দিনে নয় ইতিহাসের পথে হাঁটা দিলেই দেখতে পাবেন ১৯০০ সালের সেই বিপ্লবী মেদিনীপুরকে যেখানে হাওড়া-খড়্গপুর লাইনের সুখ্যাতি ছড়িয়েছে এই চপের হাত ধরেই। খোঁজ নিলেই এখানে হয়ত এমনও অনেক দোকান পেয়ে যেতে পারেন যে ইতিমধ্যেই বয়েসের সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ফেলেছে।
চপ এমনই একটি চটপটি মুচমুচে জলখাবার যার ভরপুর অস্তিত্ব রয়েছে ভারতীয় স্বদেশী আন্দোলনের প্রতি পাতায়। বিপ্লবী আখড়া মানেই তখন শালপাতার ঠোঙা আর চপ-মুড়ির জমাটি আসর। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসও কিন্তু এই চপ-মুড়ির রসনা তৃপ্তি থেকে বাদ পড়েননি। পোড়ো ইতিহাসের সেই জিভে জল আনা সাক্ষীটিকে আঁকড়ে আজও মেচেদা ও পাঁশকুড়ার আনাচে কানাচে উগ্র আঁচে ফুটন্ত তেলে ভেজে চলে খাস্তা লালচে আলুর চপ।
Discussion about this post