খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধো মন”, লোকগীতিটি তো সবারই জানা। এই গান গেয়েই পল্লীর আঁকেবাঁকে বাউলরা ফেরে একতারা বাজিয়ে। আর সেই সুরেই গ্রামবাংলায় শুরু হয়ে যায় খেজুর রসের সংগ্রহ পর্ব। শীত মানেই কনকনে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা, সাথে পিঠেপুলির রকমারি আয়োজন। সরুচাকলি, পাটিসাপ্টা, গোকুলপিঠে, দুধপুলি আরও কত নামের বাহার। খেজুর গুড় ছাড়া পিঠে, তাও আবার হয় নাকি? আর বাঙালি যতই আধুনিক হয়ে উঠুক না কেন, ঐতিহ্যের সংরক্ষণে কোনও কার্পণ্য নেই তার। তাই শীত পড়লেই নতুন খেজুর গুড়ের চাহিদাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। বাজার মোটামুটি গুড়ের পসরায় ভরপুর।
নলেন গুড় ও খেজুর গুড়ের চাহিদা অনুযায়ী জোগান বরাবরই কম। আর তাই ব্যবসায়ীদের ভেজালের মানও আজ শীর্ষে পৌঁছেছে। আসল খেজুর গুড়ের স্বাদ কিরকম, তা বাংলা ভুলেই গিয়েছে। সুতরাং, বাঙালির সাধের গুড়ে এখন সত্যিই বালি পড়েছে। তার সাথে মিশছে চিনি। তাই খেজুর গুড়ের পাড়া জাগানো সেই মোঁ মোঁ গন্ধটা আজ আর মেলে না। তবু ক্রেতা তার জায়গায় অসহায়। কিন্তু আর না। আসল গুড় চেনার কৌশলটি যদি একবার জেনে যান, তবেই কেল্লাফতে। আপনি নিজেই পরখ করে নিতে পারেন গুড়ের খাঁটি ভেজাল। চলুন তবে সেগুলোই একটু শিখে নেওয়া যাক।
•আসল গুড়ের রং গাঢ় বাদামী। রাসায়নিক পদার্থের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি গুড়কে হলদেটে করে। গুড়ের বর্ণ দেখেই কিছুটা আন্দাজ করে নিন। •এবার গুড়টি একটু জিভে ঠেকান। হাল্কা তেতো লাগলে, সে গুড়ে বেশিক্ষণ জ্বাল দেওয়া হয়েছে। আর যদি নোনতা হয়, তবে ভেজালের মান বেশই রয়েছে। স্বাদ নিয়েই বুঝে নিন, কেনা যায় কিনা। •গুড় মিষ্টি করতে চিনি কৃত্রিমভাবে মেশানো থাকে। আর সেই গুড় দেখতে একটু থকথকে হয়। স্বাদেও চিনির কটকটে মিষ্টি পাওয়া যায়। সে গুড় না কেনাই ভালো। •গুড় খাঁটি হলে তার ধার নরম। কেনার সময় ধারে একটু চাপ দিলে যদি কঠিন মনে হয়, তবে সেটিও বাতিলের খাতায়।
নিজের ও নিজের পরিবারের সুস্থতার দায়িত্ব যখন আপনারই কাঁধে, তখন একটু যত্নশীল তো হতেই হবে। তাই গুড়ের পদ বানানোর আগে দেখে নিন তার শুদ্ধতা ঠিক কতোটা।
Discussion about this post