পাতা সংগ্রহ করাকে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হতে হল পুরুলিয়া জেলার গড় পঞ্চকোটের গোবাগ এলাকার নিতুড়িয়া থানা এলাকার আদিবাসী মহিলাদের। ঘটনাটি ঘটে ২৩ ডিসেম্বর সকাল ৭টা নাগাদ। সূত্রের খবর, ঘটনার দিন সকালে জঙ্গলে শাল পাতা সংগ্রহ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন আদিবাসী মহিলা। তাদের আটক করে বন দফতরের কর্মীরা। প্রায় সকাল সাড়ে ১০ পর্যন্ত আটক করে রাখা হয় তাদের। বারবার অনুরোধ করা হলেও কাউকে তাদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি আদিবাসী মহিলারা বাড়ি চলে যাবে এমন প্রতিশ্রুতি দিলেও তাদেরকে ছাড়া হয়না। বরং তাদের বিরুদ্ধে হওয়া এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার ভয় দেখানো এবং এফআইআর করার হুমকিও দেওয়া হয়। বলা হয় বিট অফিসার ও বনদফতরের রেঞ্জার না আসা পর্যন্ত তাদেরকে ছাড়া হবে না। তবে স্থানীয়দের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে চাপের মুখে পড়েই তাদেরকে ছাড়তে বাধ্য হন বন দফতরের কর্মীরা।
পুরুলিয়ার বন-অধিকার কর্মী রাজেন টুডু ‘ডেইলি নিউজ রিল’কে জানান, “আর কিছুদিন পরেই শুরু হতে চলেছে আদিবাসীদের এক বিশেষ পরব। যেখানে শালপাতা অন্যতম এক উপাদান। তাই পরবের জন্যই মহিলারা পাতা সংগ্রহে গিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ২০০৬ এর বনাধিকার আইনে আদিবাসীদের জঙ্গলে যাওয়ার অধিকারের কথা বলা হয়েছে। জঙ্গলে বসবাসের অধিকারের কথাও বলা হয়েছে আইনে। তা সত্ত্বেও আইন লঙ্ঘন করে কেন এরকম একটা ঘটনা ঘটল তার জবাব উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে।” এই ঘটনার পরবর্তীতে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন গড় পঞ্চকোট এলাকার মানুষরা। আগামী ২৮ ডিসেম্বর তাঁরা এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি সহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে ডেপুটেশন জমা দেবেন। পাশাপাশি বন-অধিকার আইন নিয়েও এলাকার মানুষকে সচেতন করা হবে বলেও জানান, রাজেন টুডু।
‘ডেইলি নিউজ রিল’ কথা বলল রঘুনাথপুর রেঞ্জ অফিসার বিবেক কুমার ওঝার সঙ্গে। তিনি জানালেন, গত ২৩ ডিসেম্বর সকালে রামপুর পাহাড়ের লোকাল এসপিসি তাঁর কাছে অভিযোগ করেন ঝাড়খণ্ড থেকে অটোয় কিছু বহিরাগত মানুষ এসে পাতা তুলছেন। অটোর নম্বর নাকি ছিল ঝাড়খণ্ডের। যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটে সেখানে পুরনো শাল গাছ কেটে একেবারেই নতুন শাল গাছ বসানো হয়েছে। এই গাছগুলির বয়স মাত্র ১ বছর। বিবেক কুমার ওঝা স্থানীয় বিট অফিসারকে ঘটনাস্থলে পাঠান। সেই সময়েই নাকি রাজেন টুডু মদ্যপ অবস্থায় এলে ভুলভাল দাবি করতে শুরু করেন। বিবেক বাবু নিজের সাফাইয়ে বলেন আমি এখানে ২ বছর ধরে পোস্টেড। সামান্য পাতা কুড়নো নিয়ে আগে কোনও সমস্যা হয়নি। এমনকি আমার লোকাল এসপিসি’র বিরুদ্ধেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছে স্থানীয় মানুষ।
এদিকে পরিবেশ আন্দোলন কর্মী সৌরভ প্রকৃতিবাদী তাঁর প্রতিক্রিয়া হিসেবে পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেন জঙ্গল আসলে কার? এই প্রশ্নে যিনি ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের দিকে ঝুঁকে থাকবেন নিশ্চিতভাবেই তিনি যে কোনও ধরণের মানবাধিকার ও প্রকৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ফেলেছেন। যারা তা করেননি, তাদের কর্তব্য এই ঘটনার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হওয়া।
Discussion about this post