‘মা’ বলতে ঠিক কি ভেসে ওঠে আমাদের চোখের সামনে? এক মমতাময়ী নারী যিনি তাঁর জীবন দিয়ে আগলে রাখেন আমাদের। নিজে নানান ঝড়ঝাপটা সহ্য করেও এক মিনিটের জন্যও সন্তানকে অসহায় হতে দেন না। অনেক মা তাঁদের সন্তানের জীবনে বাবার দায়িত্বটুকুও পালন করেন। ‘সিঙ্গল মাদার’দের জীবন-সংগ্রামের কথা আকছারই শোনা যায়। কিন্তু ভারতের পুনের এই তরুণ ইঞ্জিনিয়ার স্থাপন করেছেন দৃষ্টান্তের মাইলফলক। পিতৃত্ব এবং মাতৃত্বের ফারাক মুছে তিনি আজ একজন সফল ‘সিঙ্গল ফাদার’।
কী ভাবছেন? এ আর এমন কী ব্যাপার? তাহলে শুনুন তাঁর যুদ্ধের আখ্যান! ইন্দোরে বাবার জন্মদিনে অনাথ আশ্রমে মিষ্টি বিতরণ করতে গিয়েছিলেন পুনের আদিত্য তিওয়ারি। তিনি নিজেও আঁচ করতে পারেননি যে তার সঙ্গে কী হতে চলেছে। মিষ্টি বিতরণের সময় খেয়াল করলেন এক কোণে একটি বাচ্চাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে। যদিও তাঁর প্রতি নেই কারোর কোনও খেয়াল। কিছুটা কৌতূহলী হয়েই বাচ্চাটির কাছে গিয়ে জানতে পারেন বাচ্চাটির নাম অবিনাশ। তবে জন্মের পর থেকেই ‘জেনেটিক ডিসঅর্ডার’ নামক রোগে ভুগছে সে। এখান থেকেই রূপকথার গল্পের শুরু…
দিন দিন আদিত্যের অনাথ আশ্রমে যাওয়া-আসা বাড়ল। অবশ্যই তাঁর আকর্ষণের মধ্যমণি হয়ে উঠল শিশু ‘অবিনাশ’। একসময় ভালোবাসার টানেই আদিত্য দত্তক নিতে চাইলেন অসুস্থ অবিনাশকে। যদিও বাধ সাধল দেশের আইন। শিশুটিকে দত্তক নিতে চাওয়ার মুহুর্ত থেকেই এক কঠিন যুদ্ধ শুরু হল আদিত্যের। আশ্রম কর্তৃপক্ষ জানাল তাঁরা আদিত্যের কাছে অবিনাশকে দত্তক দিতে রাজি নয়। ভারতীয় আইন অনুযায়ী, ৩০ বছরের নিচে একটি শিশুকে দত্তক নেওয়ার নিয়ম ছিল না ভারতে। তাছাড়া আদিত্য একজন অবিবাহিত যুবক। বাধা আসে অন্যান্য মহল থেকেও। কিন্তু হাল ছাড়েননি আদিত্য।
অবশেষে এল ১ জানুয়ারি, ২০১৬ তারিখটি। আদিত্য এবং অবিনাশের জীবনের সব থেকে বড় ‘ডি ডে’। সবরকম আইনী লড়াই জিতে আদিত্য দত্তক নিলেন অবিনাশকে। এটাই হল আদিত্য এবং অবিনাশের গল্প। একজন বাবার গল্প যিনি একই সময়ে একজন মা। অবিনাশ এখন বড় হয়েছে, এখন সে মাঠে খেলতেও যায়। সারাদিন কাজ শেষে আদিত্য রাতে বাড়ি ফিরলে তাঁর সঙ্গে চলে অবিনাশের খুনসুটি ও পড়াশোনা। তাহলে আর কী? আমার গল্পটি ফুরালো, নটে গাছটি মুড়ল! আজ্ঞে, একেবারেই না! ট্যুইস্ট এখনও বাকি যে!
২০১৯ সালে বেঙ্গালুরুর এক অনুষ্ঠানে বিশ্বের সেরা মায়ের তকমা পেলেন আদিত্য তিওয়ারি। এই সম্মান যেন আদিত্যের জীবনে ‘মা’ শব্দটির আসল মানেরই প্রতিফলন। অবিনাশের দায়িত্ব নিজের চওড়া কাঁধে তুলে নিয়ে একাই সাজিয়ে তুলছেন সন্তানের ভবিষ্যৎ। আসলে নারীরা এই সমাজের অর্ধেক আকাশ হলে অবশ্যই বাকি অর্ধেকটা পুরুষরা। তাই কোনও ‘তান্ত্রিক’তায় আটকা না পড়ে সম্মান, মর্যাদা, অধিকার দু’তরফেই থাকুক। সমাজ লিঙ্গ-নিরপেক্ষ হোক!
Discussion about this post