“নাক নেই, কান নেই…ঝুমকা কী করে পরব?” শুনে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি অনেকে। কথাটি ২০২০ তে রিলিজ হওয়া দীপিকা পাড়ুকোনের ‘ছপক’ সিনেমার। সিনেমাতে অ্যাসিড আক্রান্ত লক্ষ্মী আগরওয়ালের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন দীপিকা পাড়ুকোন। ‘ছপক’ সিনেমাটি লক্ষ্মী আগরওয়ালের ওপর অ্যাসিড হামলার পর তাঁর ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই নিয়েই তৈরী। আবারও বাস্তব জীবনের এমনই এক হার না মানা লড়াইয়ের সাক্ষী রইল উত্তর ২৪ পরগনার অন্তর্গত ছোট শহর স্বরূপনগর। অ্যাসিড আক্রান্ত স্বরূপনগরের সুনীতার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন বর্ধমান নিবাসী উত্তম আঁকুড়। পেশায় উত্তম একজন চিনা রন্ধন শিল্পী। কিছু দিন আগেই দুজনের আলাপ হয়।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে ২০১০ সালে পাশের বাড়ির এক যুবকের প্রেম প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সুনীতার মুখে ছোঁড়া হয়েছিল বিষাক্ত অ্যাসিড। ঝলসে গিয়েছিল তার মুখ চোখ সহ শরীরের বিভিন্ন অংশ। আর পাঁচজন মেয়ের মতো সুনীতাও আরো বহুদূর পড়াশোনা করে স্বনির্ভর হতে চেয়েছিল। সেই সময় সে প্রস্তুত ছিল না বিয়ের জন্য, এটাই নাকি ছিল তার অপরাধ। তারপর কেটে গেছে ১২ বছর। শত ঝড় ঝাপটা অতিক্রম করে আজ সুনিতা প্রতিষ্ঠিত। সুনীতা আজ একটি লড়াইয়ের নাম।
সুনীতা চিৎকার নামের সামাজিক সংগঠনের একজন কর্মী। এই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য খোলা বাজারে অ্যাসিড বিক্রির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ও অ্যাসিড আক্রান্ত মেয়েদের পাশে দাঁড়ানো। সে নিজেকে কখনো থামিয়ে রাখেনি। কখনও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তো কখনো নিজে হাতে লিখে, কখনও নানান পত্র পত্রিকার মাধ্যমে নিজের কথা তুলে ধরেছে সকলের সামনে। লিখেছে তার জীবনের মূলস্রোতে ফিরে আসার অভিনব গল্প।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর গড়ে ৮০ জন মানুষ অ্যাসিড হামলার আক্রান্ত হন। তাদের বহু ঘটনা থেকে যায় অগোচরেই। দীর্ঘ আন্দোলনের পর ২০১৩ সালে আইন পাশের মাধ্যমে খোলা বাজারে অ্যাসিড বিক্রী বেআইনি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বাস্তবে তা এখনও বন্ধ হয়নি। এই জঘন্য অপরাধ বন্ধ করতে চাই সামাজিক সচেতনতা। তবেই হাজার হাজার লক্ষী, সুনীতারা স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারবেন।
Discussion about this post