শাসক পক্ষের থ্রেট কালচার এবং বিরূপ সামাজিক পরিবেশ যেখানে আবারো মাথাচাড়া দিচ্ছে, সেখানেই সরকারের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ তৈরি করল হুগলির শেওড়াফুলি। গত ১লা ডিসেম্বর রবিবার, “তিলোত্তমার জন্য ন্যায়বিচার” এই দাবি সামনে রেখে শেওড়াফুলির সরকারপাড়ার প্রগতি সংঘের ক্লাব প্রাঙ্গণে আয়োজিত হলো “অভয়া ক্লিনিক”। এটি শুধুমাত্র একটি মেডিক্যাল ক্যাম্প নয়, বরং প্রতিবাদ এবং সেবার মেলবন্ধনে তৈরি একটি প্রয়াস। এই আয়োজনের মূল কারিগর ছিলেন অকৈতব এবং শ্রেয়া—দুজন নবপ্রজন্মের সমাজকর্মী, যাঁদের উদ্যোগে এবং পরিশ্রমে এটি সম্ভব হয়েছে।
শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি, এবং বৈদ্যবাটির সহনাগরিকদের সহযোগিতায় অকৈতব ও শ্রেয়ার নেতৃত্বে আয়োজিত এই ক্যাম্প ছিল এই অঞ্চলের প্রথম মেডিক্যাল ক্যাম্প। স্থানীয় মানুষ, রাজনৈতিক মতপার্থক্য, স্বল্প সময়ের প্রস্তুতি এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার বাধা সত্ত্বেও তাঁদের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে।
অভয়া ক্লিনিকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, রক্তচাপ মাপা এবং থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা ছিল। পাশাপাশি স্বল্পমূল্যে থাইরয়েড, ইউরিক অ্যাসিড, সুগার, এবং লিপিড প্রোফাইলের পরীক্ষার সুযোগও দেওয়া হয়। সকল পরীক্ষা হুগলির প্রসিদ্ধ বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এছাড়া, উপস্থিত ছিলেন অভিজ্ঞ সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকগণ, যারা তাঁদের পরামর্শ দিয়ে মানুষকে যথাযথ দিশা দেখিয়েছেন।
সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া ক্যাম্পে ১১টা থেকে জনসমাগম ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। স্থানীয় মানুষ এবং পথচলতি ব্যক্তিরা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে ভিড় জমাতে থাকেন। দুপুর ১:৩০ নাগাদ ক্যাম্প শেষ হলেও আরও অনেকে এই ধরনের ক্যাম্প ভবিষ্যতে আয়োজন করার অনুরোধ জানিয়ে যান।
তিলোত্তমা শুধু একটি নাম নয়, এটি একটি ভাবনা। মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে, সেবার মাধ্যমে সমাজ সংস্কারে ব্রতী হওয়ার প্রতিশ্রুতি। অকৈতব ও শ্রেয়ার নিরলস উদ্যোগে অভয়া ক্লিনিকের এই আয়োজন তিলোত্তমার আদর্শকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। তিলোত্তমার বলিদানকে সম্মান জানিয়ে অদূর ভবিষ্যতে আবারও অভয়া ক্লিনিক আয়োজিত হবে বলে জানিয়েছেন দুই উদ্যোক্তা। এটি থ্রেট কালচার, রেপ কালচার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের দাবিকে শক্তিশালী করবে।
Discussion about this post