“কোন্নগরে কি আনন্দেই কাটাতুম” – শিশু সম্রাট এবং বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী হলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সপ্তাহান্তে বেড়াতে যাওয়ার এক অন্যতম সেরা ঠিকানা হুগলীর কোন্নগরে গঙ্গার তীরে অবস্থিত অবন ঠাকুরের বাগানবাড়ি। অবন ঠাকুরের বাগানবাড়িটির কথা অনেক কলকাতাবাসীদের কাছেই অজানা। কথিত আছে, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বাড়িতেই প্রথম তাঁর ছেলেবেলার অঙ্কন শিক্ষা পেয়েছিলেন। ১৯৪৪ সালে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘জোড়াসাঁকোর ধারে’ গ্রন্থে এই বাড়ির উল্লেখ রয়েছে। একসময় ঠাকুর পরিবারের গণমান্য ব্যক্তিদের যাতায়াত ছিল এখানে। রবীন্দ্রনাথও কয়েকবার এসেছিলেন এই বাগানবাড়িতে। অবন ঠাকুর এখানে এসে সাঁতার, শিকার, নৌকা বাওয়া নিয়ে মেতে থাকতেন।
গাছগাছালিতে ঠাসা এই বাগানবাড়িতে গেলে মন ভরে যাবে। প্রায় দেড়শো বছরের পুরোনো এই বাড়িটি। ১৮৭০ সালে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবা গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। অবন ঠাকুরের মৃত্যুর পর এই বাড়িটির তেমন কোনো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি ফলে দীর্ঘদিন এই বাগানবাড়িটি জঙ্গল হয়ে পড়েছিল। অবশেষে ২০২০ সালে কোন্নগর পৌরসভার উদ্যোগে এই বাগানবাড়িটিকে পুনরুদ্ধার করা হয়। তারপরই শুরু হয় নতুন করে অবন ঠাকুরের বাগানবাড়িকে সাজানোর প্রক্রিয়া। নতুন রূপে সংস্কারের পর অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত এই বাগানবাড়ি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এই বাগানবাড়ির প্রতিটি ইট অবন ঠাকুরের ছেলেবেলার সাক্ষী।
বাগানবাড়ির মূল গেট দিয়ে ঢুকেই ডানদিকে রয়েছে বেশ বড়ো একটা লম্বা দালান, আর কয়েকটা ছোট্ট ঘর। এই ছোট্ট ছোট্ট ঘরগুলোর মধ্যে কোনওটি রন্ধনশালা আবার কোনওটি গ্রন্থাগার, অফিসঘর। অবন ঠাকুরের এই বাগানবাড়ির প্রায় প্রতিটি ঘরেই রয়েছে তাঁর আঁকা ছবির সম্ভার। এখানে তাঁর আঁকা মাদার ইন্ডিয়া ও শাহজাহান ছবির রেপ্লিকাও দেখা যায়। এছাড়াও রয়েছে তাঁর অনন্য সৃষ্টি কাটুম কুটুমের নির্দশন। বাগানবাড়ির একদম শেষ প্রান্তে একটি কোণে রয়েছে পীরের সমাধিস্থল। তার পাশেই আছে স্নানাগার, এটিকে বর্তমানে একটি কৃত্রিম জলাশয়ে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এখানেই প্রথম সাঁতার শিখেছিলেন ছোট্ট অবন ঠাকুর। ২০১৭ সালে এই বাগানবাড়িটি হেরিটেজ তকমা পায়। রাজকীয় ও প্রকৃতির সৌন্দর্য্য দ্বারা পরিপূর্ণ এই একতলা সাদা রঙের বাগানবাড়ির কড়ি বর্গার ছাদ, জানলার খড়খড়ি, উঁচু উঁচু খিলান আজও পুরনো সময়ের অস্তিত্বকে বয়ে নিয়ে চলেছে।
প্রায় ১৩ বিঘা জমির উপর নির্মিত এই বাড়িটিতে রয়েছে শান্তিনিকেতনের আভাস। এখানকার মনোরম পরিবেশ পর্যটকদের আর্কষণ করে। তাই অনেক পর্যটকদের আনাগোনা প্রায় লেগেই থাকে এই বাগানবাড়িটিতে। এই বাগানবাড়িতে আসতে চাইলে সকাল দশটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটের মধ্যে আসতে হবে। ট্রেনে কোন্নগর স্টেশনে নেমে অটো বা টোটো ধরে সোজা পৌঁছে যাওয়া যায় এই বাগানবাড়িতে। বাসেও জিটি রোড ধরে চলে যাওয়া যায় এই জায়গায়। সপ্তাহে প্রতিদিনই খোলা থাকে এই বাড়ির দরজা।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – অরুণাভ সান্যাল
Discussion about this post