কোনো একটি গাড়ি নাকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নেপথ্যে! লোকে বলে এই গাড়ির কারণেই নাকি ঘটে গিয়েছে ইতিহাস সৃষ্টিকারী বিশ্বযুদ্ধ। অভিশপ্ত বাড়ি অথবা অভিশপ্ত জায়গার কথা অনেকেই শুনেছেন। এমনকি ‘অভিশপ্ত নাইটিও’। কিন্তু তা বলে অভিশপ্ত গাড়ি? একটু খোলসা করেই বলা যাক! সময়টা বিশ শতকের শুরুর দিক। দ্য গ্রাফ অ্যান্ড স্টিফ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পৃথিবীর বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল অটোমোবাইল তৈরি করেছিল। তারা বাস, প্রাইভেট গাড়ি এবং ট্রাক তৈরি করতো। তবে সুনাম এবং সুখ্যাতি আসে বিশেষত বিশ শতকের শুরুতে কয়েকটি প্রাইভেট গাড়ি তৈরির জন্য। বুঝতে নিশ্চয়ই বাকি নেই অভিশপ্ত গাড়িটি তৈরি হয়েছিলো এদের হাত ধরেই। অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্চ ডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দ। তার জন্যই এক বিশেষ গাড়ি তৈরি করে এই প্রতিষ্ঠান। গাড়িটির নাম গ্রাফ অ্যান্ড স্টিফ লাক্সারি লিমুজিন। ইঞ্জিন নম্বর ২৮৭। অদ্ভুত ঘটনা হল, এই গাড়ি ব্যবহারের প্রথম দিনেই যুবরাজ আর্চ ডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দ এবং তার স্ত্রী সোফি আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।
এই হত্যাকান্ডের ঠিক পরেই সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে অস্ট্রিয়া। এই ঘোষণার মাধ্যমেই ঘন্টা বেজেছিলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের। পরের ১২ বছরে এই ডাবল ফেটন অভিশপ্ত গাড়িটি ১৫ জন আলাদা আলাদা মালিকের কাছে গিয়ে পৌঁছেছিলো। যাদের মধ্যে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ১৩ জনই। এমন কয়েকটি ঘটনা পড়লে অবাক হবেন আপনিও। ফাইভ-বি সেনাদলের ক্যাপ্টেন ১৯১৫ সালে গাড়িটি কিনেছিলেন। মাত্র নয় দিন। তারপরই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মারা যান তিনি। এরপর গাড়িটি প্রায় তিন বছর পড়েছিলো। ফের দুর্ঘটনা ঘটে ১৯১৮ সালে। যুগোস্লাভিয়ার ততকালীন গভর্নর অস্ট্রিয়া সফর করেন। ফেরার পথে তিনি গাড়িটি কিনেছিলেন । এই গাড়িতে গভর্নর চারটে ভিন্ন ভিন্ন দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। এরপরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন গাড়িটি বিক্রি করার। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। দুর্ঘটনার আঘাতজনিত কারণে শেষমেষ মৃত্যুই হয় তার।
এমন সব ঘটনার কারণেই অভিশপ্ত গাড়িটির কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এতো কিছুর পরেও এক চিকিৎসক গাড়িটি কেনে। তিনি ছিলেন যুগোস্লাভিয়ার গভর্নরের বন্ধু । তিনিও গাড়িটি কেনার কিছুদিনের মধ্যেই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যান। চিকিৎসকের মৃত্যুর পরেও যে কিভাবে আরও বেশ কয়েকজন গাড়িটি কিনেছিলেন তা রহস্যই রয়ে গিয়েছে। আর প্রতিবারই মালিকের মৃত্যু হয়েছে। এতোগুলো ঘটনা! সবই কি কাকতালীয়? নাকি সত্যিই গাড়িটি অভিশপ্ত? কথায় আছে যার শেষ ভালো তার সব ভালো। তবে এই গাড়িটির ক্ষেত্রে শেষটা ভালো ছিলো না। শেষ মালিকের মৃত্যুর পরে অস্ট্রিয়া কর্তৃপক্ষ গাড়িটি কিনে রাখে। সেটিকে জাদুঘরে রাখা হয়। জাদুঘরও স্থায়ী হতে পারেনি। ১৯৪৫ সালের জুলাই মাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীনই বোমা বিস্ফোরণে জাদুঘরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মনের মধ্যে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে, গাড়িটি কি তবে সত্যিই অভিশপ্ত ছিলো? তা আজও রহস্যই রয়ে গিয়েছে।
Discussion about this post