আমরা যারা নব্বই দশকের মানুষ তাদের কাছে মাদুর এক প্রকার নস্টালজিয়ার বস্তুই বলা যায়। ধরে নেওয়া যাক নব্বই দশকের শীতের দুপুরের এক দৃশ্য! শীতের হালকা রোদে ছাদে শতরঞ্চি পেতে বসে অল্প বিস্তর ঢুলতে ঢুলতে পড়া মুখস্ত করার অভ্যেস আমাদের অনেকেরই হয় তো মনে আছে। কিংবা গরমের কোনও রাতে লোডশেডিংয়ে মাদুর পেতে ভূতের গল্প নিয়ে আড্ডা! মাদুর নিয়ে এই নস্টালজিক অনুভূতির জন্মভূমি কিন্তু এই বাংলাতেই। অনেকেই হয় তো জানেন না পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং গ্রামের বিশ্বখ্যাত শতরঞ্চি মাদুরের কথা।
তবে এই মাদুর তৈরি ততোটাও সহজ কাজ নয়। কারণ এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় এক বিশেষ ধরণের ঘাসের। এই ঘাস ‘সবং ঘাস’ নামেও পরিচিত। এই প্রজাতির ঘাসের বিজ্ঞানসন্মত নাম হলো- ‘Cyperus Pangorei’ যা বহুবর্ষজীবী বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। যদিও এই উদ্ভিদগুলি নদী চরে নিজের থেকেই জন্ম নেয়। তবে মাদুর তৈরির বিশিষ্ট উপকরণ হিসেবে এই ঘাসের প্রচুর পরিমাণে চাষ করা হয়। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪-৬ ফুটের মধ্যে হয়৷ এই নিয়ে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই গবেষণা শুরু করেছে। এই মাদুরের গুণগত মান বিচার করা হয় আই আই টি খড়গপুরে। মাদুর ঘাস নিয়ে অনেক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
বিশ্ব জুড়ে মেশিন দিয়ে তৈরি জিনিসপত্রের কাছে হাতে তৈরি করা শিল্পের টিকে থাকা ক্রমশঃ কঠিন হয়ে উঠেছে। যদিও যান্ত্রিকতার যুগে নিজের কাজের দক্ষতা এবং জীবিকার টানাপোড়েনে অনিশ্চিত হয়ে উঠছে কত কারিগরদের ভবিষ্যত। শোনা যায় সবংয়ের এই শতরঞ্চি মাদুরের খ্যাতি ও কদর নাকি মুঘল সাম্রাজ্যেও কম ছিল না। সবংয়ের এই কুটির শিল্প জায়গা করে নিয়েছে সারা বিশ্ব জুড়েই।
এই মাদুর শিল্প বর্তমানে ভারতের ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসাবেও স্বীকৃতি পেয়েছে। এমনকি সবংয়ের দুই মহিলা মাদুর শিল্পী গৌরী রাণী জানা ও গৌরী বালা দাস “ন্যাশনাল ক্র্যাফট পুরস্কার”-এ সম্মানিত হয়েছেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতির প্রভাব মাদুর শিল্পের ওপরেও পড়েছে বেশ। দাম বেড়েছে মাদুর তৈরির উপকরণেরও। যদিও এখানে মাদুরের দামের রেঞ্জ ছিল ১৫০ টাকা থেকে ১০০০ অবধি। বর্তমান পরিস্থিতি দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন শিল্পীরাও। এই লোক শিল্প শুধু বাংলাই নয় ভারতবর্ষেও গর্ব।
চিত্র ঋণ – UNFOLD বাংলা
Discussion about this post