মানবসভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথেই যেন পাল্লা দিয়ে ঘটছে মানুষের নৈতিক অধঃপতন। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ, অতিরিক্ত অর্থের লোভে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীতে ভেজাল মেশানো! সঙ্গে দোসর কৃষিজমিতে ক্ষতিকর রায়াসনিকের অপরিণামদর্শী প্রয়োগ। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে নিরাপদ খাবার খাওয়া প্রায় অসম্ভব একটি বিষয়। আমরা সকলেই হয়তো কখনও না কখনও ভেবেছি, বাজারে প্রচলিত ব্র্যান্ড ছেড়ে যদি সরাসরি কৃষকদের থেকে খাঁটি অর্গ্যানিক জিনিস কিনতে পারতাম! তবে জানেন কি, ঠিক সেই স্বপ্নকে সত্যি করতেই মাঠে নেমে পড়েছে বাংলার কৃষকদের এক সরকারি সমবায় ব্র্যান্ড – ‘সুন্দরিনী ন্যাচারালস্’! শুধু তাই-ই নয়, সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দেশের প্রথম মহিলা ভিত্তিক অর্গানিক কোঅপারেটিভ হল এই ‘সুন্দরিনী’!
২০১৫ সালে স্থানীয় ‘সুন্দরী’ গাছের নাম থেকে ব্র্যান্ডটির নামকরণ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুন্দরবনের হাজার হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক মহিলা কৃষকই এই সুন্দরিনী ন্যাচারালসের প্রাণশক্তি! ভারত সরকারের NPOP নির্দেশিকা মাথায় রেখেই জৈব পদ্ধতিতে পুষ্টিকর, রাসায়নিকমুক্ত, ভেজাল বিহীন খাদ্য উৎপাদনে তাঁরা বদ্ধপরিকর। তাঁদের সাহায্যের জন্য আছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের একটি দল। শুধুমাত্র খাঁটি খাবার মানুষের মুখে তুলে দেওয়াই নয়, বাজারচলতি আর পাঁচটা ব্র্যান্ডের থেকে অনেক দিক থেকেই আলাদা এই সুন্দরিনী!
পূর্ণিমা মন্ডল, মায়ারাণী দাস সহ সুন্দরবনের বহু ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক নারী কৃষকদের ক্ষমতায়ন ঘটছে এর হাত ধরেই। উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রির সময় দালালদের মধ্যস্থতা ও বিপদে পড়ে কৃষকদের স্বল্প মূল্যে দ্রব্য বিক্রি জনিত ক্ষতি বন্ধ করার ক্ষেত্রেও কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে এই ব্র্যান্ড। তাই অল্প সময়েই যে বেশ একটা ভরসার জায়গা হয়েছে উঠেছে সুন্দরিনী, সে কথা তো বলাই বাহুল্য!
এতক্ষণে নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে, কোন কোন সামগ্রী আপনি এখানে পেতে পারেন ও কীভাবে! স্থানীয় মধু ছাড়াও সেই তালিকায় রয়েছে জৈব গরুর দুধ, ঘি, বাটার, পনীর, দই, সন্দেশ সহ বিভিন্ন ধরণের মিষ্টি, সুগন্ধী চাল, ডাল ইত্যাদি। তবে সুন্দরিনীর ইউএসপি হল খাঁটি গরুর দুধ! গরুদের খাবার থেকে ঔষধি – সবই হয় রাসায়নিকমুক্ত। অতিরিক্ত দুধের লোভে প্রয়োগ করা হয় না কোনো সিন্থেটিক হরমোন। দুধ রাখার জন্যেও ব্যবহার করা হয় একমাত্র স্টেইনলেস স্টিলের পাত্র। বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেদের গুণমান প্রমাণ করে ইতিমধ্যেই সুন্দরিনী কুড়িয়েছে জাতীয় দুগ্ধ উন্নয়ন বোর্ডের প্রশংসা! সরাসরি ওয়েবসাইট বা অ্যামাজনে অর্ডারের মাধ্যমে আপনি সমস্ত প্রোডাক্ট বাড়িতে ডেলিভারী পেতে পারেন। কলকাতাবাসীদের জন্য রয়েছে বিশেষ মোবাইল অ্যাপ ও আউটলেটের সুবিধা। তবে আর দেরী কিসের? কাল থেকে আপনিও পাশে দাঁড়ান এমন অসাধারণ উদ্যোগের, আর বিনিময়ে পেয়ে যান সুস্থ শরীর!
Discussion about this post