সাম্প্রতিক কালে একদল মানুষ ধর্মকে ঘিরে যখন হানাহানিতে ব্যস্ত ,ঠিক তখনই মনোহলী গ্রাম সম্প্রীতির ও সৌভ্রাতৃত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখে দুনিয়ার কাছে। কোনো সমান্তরাল বিশ্ব নয়, এই মনোহলী পশ্চিমবঙ্গেরই এক অখ্যাত গ্রাম। সুকান্ত ভট্টাচার্য যে বঙ্গকে দিয়েছিলেন ‘দুর্মর’ বিশেষণ সেই বঙ্গেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। মনোহলী আজও অজান্তেই অটুট রেখেছে কবি সুকান্তের আবেগ।

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন ব্লকের অন্তর্গত মনোহলী গ্রাম। গ্রামে হিন্দু মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের লোকেরই বসবাস। কিন্তু তারা চলে নিজেদের নিয়মে, যে নিয়মে ঠাঁই নেই নোংরা সাম্প্রদায়িকতার। “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার” কথাটি এখানে ঘোর বাস্তব। কার্তিক মাসের দীপান্বিতা অমাবস্যায় মনোহলী আলোয় সেজে ওঠে প্রত্যেক বছর। জমিদার আমল থেকেই এই গ্রামে দীপান্বিতা অমাবস্যায় হয়ে আসছে জোড়া কালী পুজো। শ্যামা এবং নিদয়া কালী এ গ্রামের মন্দিরে অধিষ্ঠাত্রী দেবী। মন্দিরের পাশেই অবস্থিত পীর সাহেবে মাজার। তবে সেখানে নেই ধর্মান্ধতার চোখ রাঙানি। একদিকে কালী পুজোয় মন্দিরে যখন আয়োজন চলে খিচুড়ি প্রসাদের অন্যদিকে পীরের মাজারে দেওয়া হয় সিন্নি ভোগ। গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করেন ,ধর্ম তো তাদের একসাথে থাকতেই শেখায়। কারো কাছে সৃষ্টিকর্তার এক নাম ভগবান কারো কাছে আল্লাহ। তাদের মতে ঈশ্বরের উপাসনাই যেখানে মূল সেখানে ধর্মীয় ভেদাভেদ নিতান্তই শিশুসুলভ আচরণ।
আরও পড়ুন চিনা মা কালীর মন্দির! পুজোর ভোগে থাকে নুডলস্ আর চপসি!
মন্দিরে শ্যামা ও নিদয়া কালীর পুজো শুরু হয় পাশেই সমান্তরাল ভাবে মাজারে চলতে থাকে কালেমা পাঠ। মাজারে সিন্নি চড়ানোর পরই মন্দিরে শুরু হয় বলিদান। মন্দির ও মাজারের সমস্ত খরচা বহন করে পুজো কমিটি। “একই বৃন্তে দুইটি কুসুম” পঙক্তির এর থেকে যথার্থ উদাহরণ আর কিইবা হতে পারে? কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গ্রামবাসী জাতি-ধর্মের উর্ধ্বে উঠে মেতে ওঠে উৎসবে। এ যেন মিলনোৎসব, যার সীমানায় এসে থমকে দাঁড়ায় বহির্বিশ্বের সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প।
আরও পড়ুন কালীপুজোর পর আজ বাঙালির অন্নকূট উৎসব, প্রসাদী অন্ন দূর করে অভাব!
মনোহলী গ্রামের বর্তমান প্রজন্ম এই পরম্পরা মেনে আসছে তাদের বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকে। কেউই নিশ্চিত নয় এই পরম্পরার আসল বয়স সম্পর্কে। তবে বয়সের দলিল স্মৃতিতে হারিয়ে গেলেও হারিয়ে যায়নি গ্রামের নিজস্ব ঐতিহ্য। যেখানে উৎসব নিয়ে কারো ঔদ্ধত্য নেই। এ যেন সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘ভারতবর্ষ’ যেখানে মানবধর্ম পালনের ন্যায় গৌরব আর কোথাও নেই।
চিত্র ঋণ – Bengali News Hunt.com, One India Bengali
 
	    	 
                                





























 
		    








Discussion about this post