জনবসতিহীন ঘন জঙ্গল। যেখানে দিনের আলোতেও যেতে ভয় পান অনেকে। আশে পাশের এলাকার বাসিন্দাদের মুখে মুখে এখনও ঘুরে বেড়ায় বহু হাড়হিম করা কাহিনী। সেখানেই একরত্তি জায়গায় আজও পূজিতা হন রঘু ডাকাতের আরাধ্য রটন্তী কালী।কালিকা তন্ত্রমতে তন্ত্র সাধকদের সাধনস্থল হিসেবে স্বীকৃত এই স্থান।মাঘ চতুর্দশী ও ভুত চতুর্দশীতে মহা আড়ম্বরে পুজো হয় রটন্তী কালীর। শোনা যায়,কার্তিক অমাবস্যাতেই মা কালীর পুজো করত রঘু ডাকাত।
লোকমুখে প্রচলিত, আজ থেকে প্রায় দুশো বছর আগে ব্রিটিশ পুলিশ নদীয়া থেকে রঘু ডাকাতকে ধরার চেষ্টা শুরু করে।তখন ধরা পড়া থেকে বাঁচতে রঘু ডাকাত ও তার দলবল কেতুগ্রামের অট্টহাসের জঙ্গলে ডেরা বেঁধেছিল।ত খন এই জঙ্গলেই রঘু ডাকাত শুরু করেছিল কালীপুজো। পরবর্তীতে এখান থেকেই বীরভূম, মুর্শিদাবাদও বর্ধমানের পাশ্ববর্তী অঞ্চলে লুটপাঠ চালাত সে। চিঠি দিয়ে ডাকাতি করতে যেত রঘু ডাকাত। জানা যায়,রটন্তী কালীর পুজো করে তারপর সে যেত ডাকাতি করতে। তখন থেকেই এই দেবী রঘু ডাকাতের কালী বলে পরিচিত। দেবীর পাষাণ মূর্তির ওপর মহিষাসুরমর্দিনীর প্রস্তর মূর্তি রেখে চলে নিত্যসেবা। প্রায় তিরিশ একর ঘন জঙ্গলের মধ্যে রটন্তী কালীর প্রস্তর মূর্তিকে ঘিরে বসে কালী পুজোর আয়োজন।
এককালে নিজের পূজিত দেবীকে সন্তুষ্ট করতে নরবলি দিত রঘু ডাকাত। পরে তা বন্ধ হলেও সেই হাঁড়িকাঠ আজও আছে।তবে শোনা যায়, এখন মাঝে মধ্যে ভক্তদের অনুরোধে ছাগ বলি হয়ে থাকে। পুরোহিত মহেন্দ্রশঙ্কর গিরির কথায় – “এই পুজো রঘু ডাকাতের হাত ধরে। গভীর জঙ্গলে রঘু ডাকাত পুজো করে বেরাত। বিশেষ দিনে রঘু ডাকাতের নামে পুজো।” শোনা যায়,জঙ্গলের মধ্যে আছে পঞ্চমুন্ডির আসন। এই আসনেই বসে তন্ত্রসাধনা করে গিয়েছেন সাধক বামাক্ষ্যাপা, গিরীশ ঘোষ।
সময় বদলেছে। আজ আর নেই রঘু ডাকাত বা তার দলবল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গিয়েছে আচার বিধিও। কিন্তু আজও রটন্তী কালীর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে রঘু ডাকাতের নাম। প্রতি কালীপুজোর রাতে আজও কেতুগ্রামের সব রূপকথা যেন বাস্তবের রূপ নেয়।
Discussion about this post