জানুয়ারি মাসের শুরু থেকেই চীনের উহান প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। ঠিক তখনই এক চক্ষু বিশেষজ্ঞ এই রোগের প্রাদুর্ভাবের ব্যাপারে অন্য চিকিৎসকদের সতর্ক করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তখন কেউ তার কথা বিশ্বাস করেনি। এমনকি পুলিশও তার সঙ্গে দেখা করে এই ব্যাপারে গুজব না ছড়ানোর নির্দেশ দেয়। ঠিক এক মাস পর তিনি নিজেই এই রোগে আক্রান্ত হন। তখন সবাই বাধ্য হয় তার কথা বিশ্বাস করতে। আক্রান্ত অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ওয়েবোর মাধ্যমে সেই কাহিনীই বর্ণনা করেছিলেন উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ লি ওয়েন লিয়াং।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে উহান প্রদেশেই কাজ করছিলেন তিনি। তখন তিনি এক নতুন ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত সাত জনকে দেখতে পান। আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেখে তিনি প্রথমে ভাবেন তাদের হয়তো সার্স জাতীয় রোগ হয়েছে। এরপর ওই আক্রান্তদের হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। ডিসেম্বর মাসের শেষ দিক থেকেই একটি গ্রুপ চ্যাটের মাধ্যমে সহকর্মী চিকিৎসকদের এই ভাইরাসের ব্যাপারে সতর্ক করার চেষ্টা করেন লি। সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সবাইকে মাস্ক পড়ার পরামর্শও দেন তিনি। ঠিক তার চার দিন পরেই তার সাথে পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরোর কর্মকর্তারা দেখা করতে আসেন। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মন্তব্য করার এবং গুজব ছড়ানোর অভিযোগ আনেন তাঁরা। তাকে বলা হয় এর ফলে তিনি সামাজিক ক্ষতি করছেন। তাকে এই ব্যাপারে আর একটি কথাও না বলার নির্দেশ দেন কর্মকর্তারা।
পুলিশের ওই সাক্ষাতের এক সপ্তাহ পরেই এই চিকিৎসক একজন মহিলার চিকিৎসা করতে শুরু করেন। তিনি তখনও জানতেন না ওই মহিলাটি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। এর কিছুদিন পর তাঁর কাশি শুরু হয় এবং জ্বর আসে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঠিক তার কিছুদিন পরেই করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে গোটা চীন জুড়ে জরুরি অবস্থা জারি হয়। লিকে বেশ কয়েকবার করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করানো হয়েছিল। প্রায় সব পরীক্ষা গুলোতে নেতিবাচক ফলাফলও আসে। কিন্তু ঠিক তার কিছুদিন পরই এরপর ডক্টর লি মারা যান। লির মৃত্যুতে সারা চিন দেশ জুড়ে জাতীয় শোক ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি তাঁকে ‘ন্যাশনাল হিরো’ বলেও আখ্যা দেন চিনের বাসিন্দারা। ওয়েবোর কিছু ব্যবহারকারীর মতে, লি’র এই গল্পই বলে দেয় ভবিষ্যতে কোনো সংক্রমণ রোগের লক্ষণ দেখলেও, তার প্রাথমিক সর্তকতা দিতে ভয় পাবেন চিকিৎসকরা। চিনে একটি নিরাপদ জন স্বাস্থ্য তৈরি করার জন্য লাখ লাখ লি’র প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তাঁরা।
Discussion about this post