২০০০ সালটা শুরুই হয়েছিল হইহই করে। পৃথিবীর প্রায় সব শহরেরই মননের পরিবর্তন শুরু হয়। কলকাতার আবেগের পরিবর্তনেও পিছিয়ে ছিল না। নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সংযোজনে ধূসর হতে থাকে পুরানো চিত্র। এই শহরের কোন জায়গায় প্রতি বর্গ ফুটের আকাশ ছোঁয়া দাম অথচ সেই জায়গাতেই রাস্তার উল্টোদিকে কৌলিন্যের অভাব, দারিদ্রতার লড়াই। অদ্ভুত লাগলেও আমার শহর, তোমার শহর এক বৈপরীত্যের নাম শহর কলকাতা। কিন্তু পুরানো কলকাতার দিকে যদি তাকানো যায় সেই সময় বারোয়ারী পুজো অপেক্ষা বেশী পরিমাণে বিত্তশালী পরিবারেই পুজো হত। লর্ড ক্লাইভের পর বেন্টিঙ্ক সাহেব সবচেয়ে বেশী শারদ উৎসবে থাকতেন। আবার কলকাতার প্রাচীনতম অধিবাসী শেঠদের বাড়ির শারদ উৎসবের উজ্জ্বল বর্ণনা পাওয়া যায় আলেজেন্ডার হ্যামিলটনের কলমে। এখন এই সবই ইতিহাস। এখন তো পুজো মানেই থিম, উচ্ছ্বাস, প্রতিযোগিতা রুজি রোজগার, সম্মান,খেতাব আরও অনেক কিছু। আজ যেমন রয়েছে বেহালার আর্দশ পল্লী।
যেখানে শতকরা নব্বই ভাগ ওপার বাংলার মানুষ। যাদের নিত্যদিনের মধ্যবিত্তার মাঝে নিজেস্ব দক্ষতা মূলক ভাবনা বেশী। এই পুজোর একটা লক্ষ হল গণচেতনা তৈরী করা। উপাদান ভিত্তিক বা বিষয় ভিত্তিক উপস্থাপন প্রাধান্য পায়। কোন একটা লুপ্তপ্রায় শিল্পকে নতুন আঙ্গিকে তুলে ধরে। শিল্প কেন্দ্রিক ভাবনাটা রূপান্তরিত করার জন্য সনারুদ্র পালের সঙ্গে এরা যোগাযোগ করে। মূলত বিষয় মৌলিকত্ব আর নিজেস্ব দক্ষতায় কোন আইডিয়াকে তুলে ধরাতে এরা বিশ্বাসী। গত তিনটে বছরের কথাই ধরা যাক, ১) রবীন্দ্রনাথের গান- শিল্পীর টানে দুর্গার আর্বিভাবের গল্প, ২) দুর্গার নানা রূপ এই ভাবনাগুলোকে বর্ণাঢ্যভাবে উপস্থাপন করে।
এই দুর্গার রূপকে ব্যাঙ্ক কর্মী অরবিন্দ ঘোষ ক্লাবের কুড়ি বাইশটা ছেলেকে অনুপ্রাণিত করে ভাস্কর্য বানান এবং তা পরে ফাইবার গ্লাসে রূপদান করেন। যা ক্লাবের সুইমিং পুলের বাউন্ডারির দেওয়ালে শোভাবর্ধন করে। আসলে পুরনো কলকাতার পুজোতে ভাবনার বৈচিত্র্যময় মৌলিক উপস্থাপন ধারণাগুলো ছিলই না। জাত ফিরিঙ্গি, জবরজঙ্গী থেকে শুরু করে লালবেলাট, মেম, বাঈজী নর্তকী এরাই জড়িয়ে আছে পুরানো কলকাতার পুজোর সঙ্গে। কেউ মত্ত মোহ মদে, তো কেউ, রূপে ,কৌতুকে। সেখানে অভিনবত্বের ছাপ পাওয়া যায় নি, সেটাই খুব স্বাভাবিক।
Discussion about this post