মায়ের কাছে অসম্ভব বলে বোধহয় কিছুই হয় না। ভূমিষ্ট হওয়ার পর থেকে শিশুর একমাত্র নির্ভরতা হয় তার মা। মাতৃত্বের কোনও প্রশিক্ষণ লাগে না, তবুও বিশ্বজুড়ে মাতৃত্ববোধের হাজার উদাহরণ আমাদের চোখের সামনে উঠে আসে অনবরত। সন্তানের সুখের জন্য যে কোনও রকম ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকেন তার মা। আর এই বিষয়ে হয়ত সেরার সেরা শিরোপা দেওয়া যায় কবিতা প্যাটেলের (নাম পরিবর্তিত) মাকে।
কবিতার বিয়ে হয়েছে প্রায় ১২ বছরের কাছাকাছি। কিন্তু সন্তানের মুখ দেখার সৌভাগ্য হয়ে ওঠেনি কোনোদিন। ছ’টি সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেও পৃথিবীর আলো দেখাতে তিনি অক্ষম। প্রথম গর্ভধারণে ভ্রুণের হৃৎপিন্ডই তৈরী হয়নি। দ্বিতীয়বারে মাত্র ২৩ সপ্তাহে বাচ্চার প্রসব হয়। ২৩ দিন পরই মারা যায় নবজাতক। এভাবে চোখের সামনে একের পর এক মিসক্যারেজ, প্রিম্যাচিওর শিশুর মৃত্যু তাঁকে মানসিকভাবে ক্রমশ শেষ করে ফেলছিল। এমন পরিস্থিতিতে একমাত্র উপায় ছিল সরোগেসি। কিন্তু গর্ভ ভাড়া করার মতো আর্থিক ক্ষমতা ছিল না কবিতার। এই অবস্থায় কবিতার মা-ই রাজি হন তাঁর নিজের মেয়ের সন্তানকে গর্ভে ধারণ করতে। গুজরাট সরকারের অধীনে ক্লাস-১ অফিসারের পদ থেকে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত হয়েছেন কবিতার মা। আর এই বয়সেই ভয়ঙ্কর এক ঝুঁকি নিয়ে গর্ভে ধারণও করলেন সন্তানের ভ্রুণ এবং ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানেরও জন্ম দিলেন কবিতার মা। শুধুই সন্তান জন্ম নয় নিজের স্তনদুগ্ধও পান করান বছর ৫৯ এর ওই প্রৌঢ়া। কবিতা আর তার সন্তানের জন্মদিনটাও একেবারে মিলেমিশে একাকার। চলতি বছরের ৬ এপ্রিল নিজের নাতনির জন্ম দিয়ে কবিতার মা যেন এক অসাধ্য সাধন করলেন।
সন্তান জন্মের পর কবিতা ও তাঁর স্বামী যখন কোভিড আক্রান্ত হন তখন ওই ছোট্ট শিশুকে সযত্নে লালন করেন তার দিদিমা। এমনকি সিজারের জ্বালা ভুলে ঘরোয়া সব কাজও একাহাতে সামলান তিনি। সত্যিই তিনি একদিকে যেমন দশভূজা নারী অন্যদিকে মমতাময়ী মা। কোভিডের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মানুষ হন্যে হয়ে হাসপাতাল ঘুরছে। চারিদিকে খারাপ খবরে ছেয়ে পড়েছে নেট দুনিয়া। সেখানে গুজরাটের আনন্দ জেলার এই খবর সত্যি মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। মাতৃত্ববোধের এক চরম দৃষ্টান্ত দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন কবিতা প্যাটেলের মা।
Discussion about this post