জেলা, রাজ্য, দেশ! এভাবেই মানুষের তৈরী কৃত্রিম রেখা বিভক্ত করছে ভৌগোলিক পৃথিবী। বিভাজনের এই নীতির মাঝে এক টুকরো ঐক্য হলো, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ‘জেমা মসজিদ’। যেখানে আজানের সুরে একসাথে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ ও ভারত। মুহূর্তেই মানচিত্রে যেন মিলে যায় দুই ভূখন্ড।
মূলতঃ বাংলাদেশে অবস্থিত এই মসজিদটি কুড়িগ্রামের ভুরঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের বাঁশজানি সীমান্তে। ভারত-বাংলাদেশ সীমানার আন্তর্জাতিক মেইন পিলার ৯৭৮ এর সাবপিলার নং ৯ এর পাশে। এই মসজিদের উত্তরে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার ঝাকুয়াটারী গ্রাম, দক্ষিণে বাংলাদেশ। দুই দেশের মানুষেরাই সমান ভাবে অংশগ্রহণ করে এই মসজিদের প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানে। প্রতি শুক্রবার একসাথে নামাজ পড়ে দুই দেশের মানুষই। নামাজ শেষে তবারক ভাগ করে খান একসঙ্গেই।
এই মসজিদে স্থানীয়রা একসাথেই সমস্ত রকম ধর্মীয় অনুষ্ঠান করেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন সবাই। জন্মদিন থেকে প্রার্থনা এমনকি শোক অনুষ্ঠান ও তাঁরা একসঙ্গে করে থাকেন। স্থানীয়দের একাংশদের মতে,”নামেই শুধু দেশটা আলাদা। আসলে আমরা একই পাড়ার।” জানা গিয়েছে, মসজিদটি অন্ততঃ দুই দশক পুরোনো। তার বেশীও হতে পারে। অথচ এতো পুরোন একটি মসজিদ হলেও পরিকাঠামো অত্যন্ত ভঙ্গুর। কোন দেশের সরকারই এগিয়ে আসেনি এই মসজিদের সংরক্ষণে। স্থানীয়রাই নিজেরা খরচ করে সারিয়ে ফেলেছেন কিছুটা। ভারতীয় কিছু অধিবাসী বলেন আসলে এগুলো সব একটিই গ্রাম ছিল। যাদের যেখানে সম্পত্তি রয়েছে দেশভাগের পর তারা সেখানেই রয়ে গেছে। সম্পর্কগুলো তাই এখনও আত্মীয়তার মধ্যেই রয়ে গেছে, আন্তর্জাতিক আইন সেখানে বাধা ফেলতে পারেনি।
এভাবেই সময়ের সাথে একটা মসজিদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ভ্রাতৃত্ববোধ। ভারতীয়রা এখানে নামাজ বা অনুষ্ঠান ব্যতীত অতিরিক্ত সময় খুব একটা কাটান না। বিকেলের গল্পগুজব বা সুখদুঃখের দুটো কথা বলেই নিজের দেশে ফিরে আসেন। বিএসএফ-বিডিআর তাদের এই প্রীতির মাঝে কখনোই কোন বাধা সৃষ্টি করেননি। তবুও সরকারী আইন সবাই মেনে চলারই চেষ্টা করেন।
চিত্র ঋণ – দ্য ডেইলি স্টার, এস দিলীপ রায়
Discussion about this post