একগোছা স্বপ্নকে হাতে মুঠো করেই ছোট থেকে আমাদের বড় হয়ে ওঠা। তার মধ্যে বাস্তবের ছোঁয়া থাকে নিতান্তই কম। বেশিরভাগটাই কল্পনার আঁচলে মোড়া। কিন্তু ছোটতে দেখা সেই অসম্ভব কল্পনাকেই বাস্তব করে দেখালেন পুরুলিয়ার এক যুবক। তাঁর নামটি অবশ্য অনেকেরই অজানা থেকে গিয়েছে। যদিও ‘গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে’ অক্ষয় ভগৎ নামটি জ্বলজ্বল করছে। চলুন আজ সেই মানুষটির জানা অজানা কিছু তথ্যের সঙ্গে মিশে যাই।
পুরুলিয়ার বাগমুন্ডিতে চেমট পাহাড়ের কোলে ছোট্ট গ্রাম বুড়দা। নিম্নমধ্যবিত্ত এক পরিবারে চার বোনের সাথে বেড়ে ওঠা অক্ষয়ের। আর্থিক অনটনে মাধ্যমিকের পর আর সেভাবে এগোতে পারেননি পড়াশুনায়। দুধ-লটারী এসব বিক্রি করেই রোজকার যাপনটা চলছিল তাদের। ছোট পড়ুয়াদের বিনা পারিশ্রমিকে পড়িয়েওছেন। কিন্তু ছোট থেকেই বুকে পুষছিলেন ভারত ভ্রমণের স্বপ্ন। আর সেই দেখা স্বপ্ন সত্যি করতেই ২০১৮ এর ৫ মার্চ বেরিয়ে পড়লেন। পকেটে দু’হাজার টাকা আর একটা সাদামাটা সাইকেল নিয়ে এগিয়ে চললেন স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ থেকে শুরু করে রাজস্থান, কর্ণাটক সহ গোটা ভারতটাই ঘুরে বেড়ালেন প্যাডেল করে। দীর্ঘ একবছর এক মাস ছয়দিন পর বাড়ির লোকেরা ফিরে পেয়েছেন তাদের আদরের একমাত্র ছেলেকে। কখনো কোনো মন্দিরে কখনোবা আশ্রমে কখনো ফুটপাতে নির্দ্বিধায় বিশ্রাম নিয়েছেন ভ্রমণকালে। আর দেশ জুড়ে কত মানুষের যে কত সহোযোগিতা পেয়েছেন তা বলতে গিয়ে তিনি আপ্লুত হয়ে পড়েন। সেখানে ছিল না কোনো ধর্মের ভেদ। ছিল না জাত কুলের জেরা। ধর্ম বর্ণ জাত নির্বিশেষে ভারতীয়দের একজোট হয়ে বসবাসের ছবিই তাঁর চোখে ধরা পড়েছে। তবে শুধুই নিজের স্বপ্নের খাতিরে এই এতবড় ঝুঁকিটা তিনি নেননি। এর পেছনে রয়েছে আরও এক মহান উদ্দেশ্য।
পুরুলিয়ার গ্রামগুলোতে চাইলে আজও দেখা যায় বাল্যবিবাহের করুণ দৃশ্য। বয়স ১৮ পেরোনোর আগেই স্বামী-সংসারের ভার তাদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয়। অক্ষয় বাবুর নিজের দুই দিদিরই বিয়ে হয়েছে ১৪ কি ১৫ বছরে। এই বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতি কোণায় বাল্যবিবাহ বন্ধের ডাক দিতে বেরিয়েছিলেন তিনি। বিশ্বরেকর্ড তাঁকে যেটুকু জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে সেটিকে কাজে লাগিয়েই এই বার্তা পৌঁছে দিতে চান ভারতের অল্পশিক্ষিত গ্রামগুলোতে। তবে এবার অক্ষয়ের লক্ষ্য বিশ্ব। সাইকেল চেপেই রঙচঙে বিশ্বটাকে দেখতে চান তিনি । আফ্রিকা থেকে ইউরোপ তারপর এশিয়া। হিসেব মতো ৫ বছর লেগে যাওয়ার কথা। কিন্তু বিদেশের দরবারে সাহায্য কতটুকু পাবেন তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। তাই এই পাঁচটি বছরের খাওয়ার জন্য চাই পর্যাপ্ত অর্থ। তাই তিনি অনুরোধ করলেন সাহায্য। আরও অনেকটা পথ এগিয়ে যাক অক্ষয় এই শুভকামনা রইল ‘ডেইলি নিউজ রিলের’ তরফে।
অক্ষয় ভগতের পাশে থাকতে চাইলে যোগাযোগ করুন 7364895795 এই নম্বরে।
Discussion about this post