ওদের চোখ কান, নাক, হাত, পা সবই রয়েছে আমাদের মতোই। ওদের মনেও আসে নিত্যদিনের ভালো লাগা খারাপ লাগাগুলো। বাইরে থেকে দেখতেও আর পাঁচটা সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতোই। কিন্তু পার্থক্য একটাই, শরীরের আভ্যন্তরীণ ওই রাসায়নিক পদার্থটির। বৈজ্ঞানিক ভাষায় যাকে আমরা হরমোন বলে থাকি। আর তার তারতম্যেই একটা বয়সের পর, লিঙ্গ পরিবর্তনে উৎসাহী হয়ে ওঠেন তাঁরা। বুঝতেই পারছেন কাদের ব্যাপারে কথা বলছি, তৃতীয় লিঙ্গের সেই পুরুষ ও নারীদের কথা। রসিকতা ও বিদ্রুপের তীরগুলো আজও অহেতুকভাবেই, যাদের গায়ে আছড়ে পড়ে প্রতিনিয়ত। কারণ সমাজের আলো অস্বীকার করেছে ওদের বারংবার। তবে আইন ওদের স্বীকৃতির শিরোপাটা তুলে দিয়েছে এখন। তাই আজ এগিয়ে এসেছে তারা, নানা সম্মানীয় পেশার শরিক হয়ে।
পুরুষ হয়েই জন্মেছিলেন কেরলের ডাঃ ভি.এস.প্রিয়া। বাবা-মা দুজনেই ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী। তাই সেবার পেশাটি টানত তাঁকে ছোট থেকেই। কিন্তু একটা সময় পর তিনি অনুভব করলেন, ভেতরের গোপনভাবে বেড়ে ওঠা নারী সত্ত্বাটিকে। বুঝে গেলেন, এবার তাঁর ভবিষ্যৎ জীবনের পথটা হতে চলেছে লড়াইয়ের ময়দান। তবে কঠিন সময়ে পাশে নির্দ্বিধায় দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর বাবা-মা। যদিও এই বিপরীত লিঙ্গের চাহিদাটি লুকিয়ে রাখতে চাননি তিনি কোনওভাবেই। জিনু শশীধরন একসময় তাই হয়ে উঠলেন প্রিয়া। আর তখন থেকেই শুরু হল সমাজের বিরুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই।
সমাজের কটাক্ষকে হজম করেই লেগে পড়েন তিনি স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। বৈদ্যরত্নম থেকে প্রথমে বিএএমএস শেষ করলেন। ম্যাঙ্গালুরু থেকে এমডি ডিগ্রি পেলেন। এরপর পাতম্বী, কান্নুর ও ত্রিপুনিথুরায় চাকরি। এরপর ত্রিচূর সীতারাম হাসপাতালে হরমোন চিকিৎসা শুরু করার পরই লিঙ্গ পরিবর্তনের অস্ত্রোপচার হয়। নিজেকে পুরুষ থেকে সম্পূর্ণ নারীতে পরিবর্তন করলেন, হয়ে উঠলেন এক নারী।
জীবনের প্রতিটা ব্যর্থতাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন তিনি। আর সফলও হয়েছেন প্রতি পদক্ষেপে। নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন এক নতুন রূপে। মুখোশের আড়ালে নয়, নিজের নতুন পরিচয়েই বাঁচতে চান তিনি আজীবন। কাটিয়ে উঠেছেন শারীরিক এবং মানসিক বৈষম্যটাও। পিছনে না তাকিয়ে আগামীর পথে এগিয়ে এসেছেন। কেরালার প্রথম রূপান্তরকামী চিকিৎসক হিসাবে স্বীকৃতি পেলেন তাই ডাঃ ভি এস প্রিয়া। একজন পুরুষ থেকে একজন মহিলা হয়ে ওঠার সংগ্রামটা সহজ ছিল না। কিন্তু লৌকিকতার ঊর্ধ্বে গিয়ে নিজের জীবনের মূল্যটাকেই মুখ্য করে আজ তিনি একজন সমাজসেবী ডাক্তার।
Discussion about this post