সময়টা ১৭৭০-এর আশ্বিন। হাওড়ার আন্দুল রাজবাড়িতে সেবারই প্রথম শুরু হয়েছে দেবী দুর্গার আরাধনা। জাঁকজমকের অভাব নেই মোটেই। অবশ্য থাকার কথাও নয়! রাজবাড়ির প্রথম পুজো। রীতিমতো আড়ম্বরের সঙ্গে না হলে কি আর চলে! মহাসপ্তমীর সকালেই কামান শব্দে সূচনা হয়েছে পুজোর। সন্ধ্যেতে পুজো শুরুর মুখে হঠাৎ হুলুস্থুল বেঁধে গেল চারদিকে। রাজবাড়ির সামনে সার বেঁধে এসে থামল বেশ কয়েকটা জুড়ি গাড়ি। তার ঠিক পিছনেই সুসজ্জিত এক ফিটন। কি ব্যাপার? এই সময়ে এত আয়োজন করে কে এলেন রাজবাড়িতে? অপেক্ষার অবসান ঘটল একটু পরই। ফিটন থেকে যিনি নামলেন তিনি আর কেউ নন; তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অত্যন্ত কাছের এক মানুষ, স্বয়ং লর্ড ক্লাইভ!
ব্যাস! আর কী! চারপাশে তখন হইহই রব। জুড়ি গাড়ি থেকে একের পর এক নেমে চলেছে সন্দেশের ডালা। সঙ্গে ১০৮টি পদ্ম এবং হাজার টাকা প্রণামী। সেগুলি নিয়েই রাজবাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলেন ক্লাইভ। আন্দুলের রাজবাড়ির জমিদার রামলোচন রায় ছিলেন লর্ড ক্লাইভের দেওয়ান। সাহেবের সুপারিশেই ‘রাজা’ উপাধি লাভ করেন তিনি। রাজবাড়িতে দেবী দুর্গার আরাধনাও শুরু লর্ডের বুদ্ধিতেই। আর সেই পুজোয় সাহেব নিজে উপস্থিত থাকবেন না, তা কি হয়? তাই রাজবাড়ির প্রথম সেই পুজোয় তিনি স্বয়ং হাজির হয়েছিলেন। সঙ্গে এনেছিলেন ১০ হাজার টাকার সন্দেশও।
অবশ্য জমিদার এবং ক্লাইভ না থাকলেও আন্দুলের সেই পুজো কিন্তু আজও বর্তমান। আজও কৃষ্ণা নবমী তিথিতে সেখানে হয় কল্পারম্ভ। রাজবাড়ির মাঠে বসে যায় মেলা। পুরোনো রীতি অনুযায়ীই পুজোর ১২ দিন আগেই রাজবাড়ির পুজোর সূচনা হয়ে যায়। পূর্বের ঘোটকমুখী সিংহ সহ একচালাতেই পূজিত হন দেবী। অষ্টমীতে বসে ধুনুচি নাচের আসর। তবে আগের মতো বাঈজীদের নাচ আজ বন্ধ। মন্দিরটিও সেজে ওঠে আধুনিকতার সাজেই। তবু বহুকাল আগের সেই নস্টালজিয়া আজও জড়িয়ে রয়েছে রাজবাড়ির প্রতিটা দেওয়ালে। এক গোরা সাহেবের পরামর্শে শুরু হওয়া দেবীর সেই আরাধনা যেন নতুন রূপেই রাজবাড়ির জৌলুস বাড়িয়ে চলেছে আজও।
Discussion about this post