রাম আকবরদের দেশে আজও মানুষকে অনায়াসে ভাগ করা যায় ধর্ম দিয়ে। আলি-আকবর-অ্যান্টনির মধ্যেও বাধে যুদ্ধ, ঝরে রক্ত। কিন্তু ইতিহাসের পাতা ওল্টালেই দেখা যাবে আমাদের দেশের এমন অনেক নজির রয়েছে যা বিভেদ নয়, শেখায় সম্প্রীতি।
আমরা সকলেই জানি প্রাচীন ভারতে কোনও এক সময়ে একচেটিয়া ছিল মুঘলদের রাজত্ব। কিন্তু তখনও হিন্দু মুসলিমের সম্পর্ক এতটা তিক্ত হয়ে ওঠেনি। মহান মুঘল শাসক আকবর সেই সময়েই রাম এবং সীতাকে সম্মান জানিয়ে একটি মুদ্রা প্রচলন করেছিলন। ওই মুদ্রার প্রচলনের মধ্যে দিয়েই তিনি দিয়েছিলেন সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের বার্তা।
১৬০৪-১৬০৫ নাগাদ প্রথম এলাহাবাদ টাঁকশাল থেকে এই মুদ্রাগুলি ছাপা হয়। এই মুদ্রাগুলিকে ‘রাম সিয়া’ মুদ্রা নামেও ডাকা হয়। চার শতাব্দীরও বেশি প্রাচীন রৌপ্য মুদ্রাগুলোতে ভগবান রামের মুর্তি খোদাই করা ছিল যেখানে তাঁর হাতে ছিল তীর-ধনুক আর পাশে ছিল সীতা। আর মুদ্রাটির অন্যদিকে লেখা ছিল ‘আমারদাদ ইলাহী ৫০’। এই শব্দবন্ধটি আকবরের রাজত্বের ৫০ বছরকে সূচিত করে।
মহান মুঘল শাসক ১৬০৪-১৬০৫ সালে হিন্দু দেবদেবীদের সম্মানকারী মুদ্রা জারি করেছিলেন, যদিও ইসলামে মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ ছিল। যদিও তিনি তাঁর নতুন ধর্মীয় চিন্তার অংশ হিসাবে এটি করেছিলেন, যেখান থেকে বোঝা যায় তিনি সমস্ত ধর্মের সমন্বয় করতে চেয়েছিলেন।
রাজা টোডরমলের যখন শাহী কোষাগারের দায়িত্বে ছিলেন তখন তাঁর তত্ত্বাবধানে মুদ্রাগুলো ছাপা হয়। তবে দুঃখের বিষয় এই যে এই জাতীয় মুদ্রা মাত্র তিনটি পাওয়া গেছে।দুটি স্বর্ণ মুদ্রা এবং একটি রৌপ্য মুদ্রা। ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’র মতে খুব বেশি পরিমাণে এই মুদ্রাগুলো ছাপা হয়নি কারণ এর কয়েক মাস পরেই আকবর মারা যান। এই মুদ্রাগুলির মধ্যে আকবরের “সুল-ই-কুল” বা ‘সার্বজনীন ভ্রাতৃত্ব’ নীতিরও ইঙ্গিত রয়েছে।
Discussion about this post