মস্ত মস্ত বীরপুরুষরাও ইঞ্জেকশনের নাম শুনলেই লাফিয়ে ওঠে। চতুর্দিকে তাদের বীরত্ব বহাল থাকলেও ‘ইঞ্জেকশন’ যেন তাদের কাছে বিভীষিকা। এবার এই ‘ইঞ্জেকশন ভীতি’ কাটাতেই মাঠে নামল দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইআইটি খড়গপুরের গবেষকরা। এবার ছিটেফোঁটাও ব্যথা লাগবেনা ইঞ্জেকশনে, টের পাওয়ার আগেই দিব্যি কাজ সেরে ফেলবে খড়গপুর আইআইটির এই যন্ত্র। গবেষকরা এই ইঞ্জেকশনটির নাম দিয়েছেন ‘মাইক্রো নিডল’।
গর্বের বিষয় ভারতের প্রথম ‘মাইক্রো নিডল’ আবিষ্কারের পেছনেও রয়েছেন একজন বাঙালি। খড়গপুর আইআইটি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি ইলেকট্রনিক্স এবং ইলেকট্রিক কমিউনিকেশন বিভাগের গবেষক অধ্যাপক তরুণ কান্তি ভট্টাচার্য্যের তত্ত্বাবধানেই সম্পন্ন হয়েছে এই গোটা গবেষণা। গবেষকদের দাবি এই ধরনের সূক্ষ্ম মাইক্রো নিডল এর আগে এই দেশে বানানো হয়নি। এই নিডলটি চুলের থেকেও সরু। যেখানে চুলের ঘনত্ব হয় ৭০ মিলিমিটারের ধারেপাশে সেখানে এই সূচের ঘনত্ব মাত্র ৫৫ মিলিমিটার। সূচের পাশাপাশি এর সাথে তৈরি করা হয়েছে একটি মাইক্রো পাম্প, যার সাহায্যে ওষুধ আমাদের শরীরের ভিতরে সহজেই প্রবেশ করতে পারে।
দীর্ঘ ৭ বছর কসরতের পর অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকারের ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের আর্থিক সহায়তায় দেশে আসতে চলেছে এই অভিনব মাইক্রো নিডল। গবেষকদের দাবি, মাইক্রোনিডলটি চুলের থেকেও সরু হওয়ায় শরীরে প্রয়োগের পর এর দ্বারা বিন্দু মাত্র যন্ত্রণা অনুভূত হবেনা। তার কারণ এই সুঁচ আকারে এতটাই ছোট এবং সরু যে তা আমাদের শরীরের নার্ভ গুলিকে ছুঁতে পারবে না। ইনসুলিন কিংবা অন্যান্য অসুখের ড্রাগও এই বিশেষ ইঞ্জেকশন দ্বারা নেওয়া সম্ভব।
দেশজুড়ে করোনার দাপট যেই হারে বাড়ছে তা ঠেকেতে ইতিমধ্যেই দিন রাত এক করে দ্রুত বাজারে ভ্যাকসিন আনার চেষ্টা করছেন গবেষকরা। ভ্যাকসিন আসা মাত্রই আবশ্যিক হয়ে পড়বে টিকাকরণ। আর তখন ইঞ্জেকশনের ভয়ে টিকা নিতে কেউ যেন পিছিয়ে না আসেন তাই-ই এই অভিনব ভাবনা। ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বেশ কয়েকটি দেশে এই ট্রান্সডার্মাল অর্থাৎ চামড়ার এপার থেকে ওপারে ওষুধ সরবরাহের ব্যথাহীন প্রক্রিয়া খুবই জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত বলেও জানা যাচ্ছে। এবার ভারতেও মাইক্রো নিডলের হাত ধরে বিনা ব্যথাতেই সারবে একাধিক অসুখ।
Discussion about this post