আবহাওয়া দফতরের দায়িত্ব হাসিমুখেই পালন করছে কিনা একটি মন্দির! স্থানীয় মানুষজনের দাবী, শুধুমাত্র বৃষ্টির নিঁখুত পূর্বাভাসই নয়, বরং মুষলধারে নাকি ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হবে তাও বাতলে দেয় মন্দিরটি। উত্তরপ্রদেশের কানপুরের ঘতমপুর গ্রামের এই জগন্নাথ মন্দিরের কাছে হার মানতে বাধ্য হাওয়া অফিসও। শোনা যায়, বর্ষা আসার প্রায় দিন পনেরো আগে থেকেই নাকি এই মন্দির জানিয়ে দেয় আসন্ন বৃষ্টির কথা। কিন্তু কীভাবে?
ভক্তেরা জানাচ্ছেন, বৃষ্টি হতে পারে বিষয়টা তখনই বোঝা যায় যখন প্রখর রোদের মধ্যেও এই মন্দিরের ছাদ থেকে জল চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়তে থাকে। আর সেই পূর্বাভাস দিনের দিন নয়, ৬-৭ দিন আগে থেকেই নাকি দেয় এই মন্দির। ছাদ থেকে চুঁইয়ে পড়া জলের বিন্দু দেখেই স্থানীয়রা বুঝতে পারেন কেমন বৃষ্টি হবে। আরও আশ্চর্যের বিষয় হল, বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলেই যেন মন্দিরের কাজ শেষ। বৃষ্টি নামলেই মন্দিরের ছাদ থেকে জল চুঁইয়ে পড়া নাকি একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। মন্দিরের সিলিংয়ে তখন জলের চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যায় না। এমনকি তাঁরা এও জানিয়েছেন যে বছর ভারি বর্ষা হয় সেই বছর মুষলধারে জল পড়তে থাকে মন্দিরের ছাদ থেকে। আবার যে বছর বৃষ্টি হবে হালকা, সেই বছর ছাদ থেকে ঝরে পড়া জলের ধারাও হয় ক্ষীণ। এই নিয়মের ব্যতিক্রম নাকি আজ পর্যন্ত কোনও বছর ঘটেনি।
এবার আসা যাক মন্দিরের গঠনশৈলীর কথায়। আশ্চর্যজনকভাবেই অনেকটা বৌদ্ধ মঠের মতো দেখতে মন্দিরটি। এর দেওয়াল ১৪ ফুট পুরু। ইতিহাস ইঙ্গিত দিচ্ছে সম্রাট অশোকের শাসনকালে তৈরি করা হয়েছিল এই স্থাপত্য। এই মন্দিরের মূল ভক্তরা হলেন স্থানীয় কৃষকেরা। তাদের বিশ্বাস, বৃষ্টি হবে কি হবে না, বৃষ্টি হলেও ভারী না মাঝারি, ভাসাবে না ছিটেফোঁটা সব কিছুরই আগাম ইঙ্গিত দেয় এই প্রাচীন মন্দির। সঙ্গত কারণেই ওই এলাকার বাসিন্দারা এটিকে ‘বৃষ্টি মন্দির’ নামে ডাকেন। মন্দিরের আশেপাশে ৫০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকা জুড়ে প্রায় ৩৫টি গ্রামের মানুষজন বৃ্ষ্টির আগাম খবর পেতে এই মন্দিরের উপরেই নির্ভর করেন আজও। কৃষিপ্রধান অঞ্চলে চাষবাসের ক্ষেত্রেও চালকের আসনে রয়েছে বহু শতাব্দী প্রাচীন জগন্নাথ মন্দিরটি। এলাকাবাসীর মনে করেন সবটাই ঈশ্বরের লীলা। তবে খুব স্বাভাবিকভাবেই ঈশ্বরের লীলার এই বিষয়টি বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন না। কিন্তু কেন বা কীভাবে এই জল ঝরার ঘটনা ঘটে, তার কোনও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা অবশ্য তাঁরা এখনও অধরাই রয়ে গিয়েছে। তাঁদের আশা, অদূর ভবিষ্যতে রহস্যের সিন্দুক থেকে বিজ্ঞানের হাত ধরেই মিলবে ঘটনার ব্যাখ্যা।
Discussion about this post