ছোটবেলায় গল্পে পড়া টারজানের কথা মনে আছে? জঙ্গলের মধ্যেই যে ছেলেটি বেড়ে উঠেছিল গরিলাদের হাতে। হয়ে উঠেছিল জঙ্গলের রাজা! পোশাকহীন হয়ে শুধুমাত্র গাছ বা পশুর ছাল গায়ে জড়িয়েই এ গাছ থেকে সে গাছ লাফিয়ে বেড়াত সে। কিন্তু এ তো গেল গল্প কথা। বাস্তবেও কি এরকম মানুষের দেখা পাওয়া সম্ভব? যদি বলি হ্যাঁ? সম্ভব, খুবই সম্ভব! বাস্তবেও খোঁজ পাওয়া পায় ঠিক এমন এক মানুষের, ছোটবেলার গল্প কথায় যেমন টারজানের কথা আমরা পড়েছি। এক্কেবারে কমিক্সের পাতা থেকে উঠে এসেছেন যেন। তিনি, ক্যানয় জেসন। বাস্তবের ‘টারজান’!
হংকংয়ের মূল শহর থেকে একটু দূরে সমুদ্র ও জঙ্গলের এক সংযোগস্থলে থাকেন জেসন। তবে এ গাছ থেকে সে গাছে ঘুরে বেড়িয়ে কিন্তু নয়। রীতিমতো বাড়ি বানিয়ে। আর ঠিক কী কী দিয়ে তিনি বাড়িটি বানিয়েছেন জানলে আশ্চর্যই হতে হয়৷ পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল, গাছের ভাঙা ডাল এবং সমুদ্রের বালির তটে পড়ে থাকা জঞ্জাল, ঠিক এসব দিয়েই সুন্দর করে সাজিয়ে বাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। জেসনের সারাদিন কাটে নাচ করে, নতুন গানের সুর বানিয়ে, গরু-ছাগল চড়িয়ে এবং নিজের বাগানে জৈব ফল-সবজির চাষ করে। তবে অবসর সময়ে জেসন ভালবাসেন সাঁতার কাটতে এবং জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে। এছাড়াও পাহাড়ে চড়াও অত্যন্ত পছন্দের তাঁর। আর ভালোবাসেন নিজের মাথার চুল বাড়াতে। দীর্ঘ ২৪ বছর চুল কাটাননি তিনি। মনে করেন তাঁর চুলই তার স্বতঃস্ফূর্ততা এবং শক্তির উৎস। এসব নিয়েই দিনের পর দিন, বছরের পর বছর কাটিয়ে চলেছেন তিনি।
নিজের এই জীবনযাপন সম্পর্কে বলতে গিয়ে উঠে আসে জেসনের ছেলেবেলার কিছু কথা। বেড়ে ওঠা ফিলিপিন্সে। ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পর চার্চ বা মেট্রো স্টেশনে রাত কাটানো। তারপর একটু বড় হয়ে কাজের খোঁজেই হংকং আসা। তবে এখানে এসে তিনি এমন কিছু করতে চাইছিলেন যাতে তাঁর নিজের মনও শান্তি পায়। অতএব বেছে নিলেন এমন জীবনযাত্রাই। বরং তাতে ক্ষতি তো নয়ই বরং লাভই হয়েছে তাঁর। জেসনের এইরকম জীবনযাত্রায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বিখ্যাত অ্যানিমেশন সংস্থা ‘ডিজনি’ তাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য মোটা অঙ্কের অফারও দিয়েছে তাঁকে। ‘ডিজনি’র টেলিভিশন ও অনলাইন চ্যানেলে এখন একটি করে স্লটে দেখানোও হয় জেসনের এই বেঁচে থাকার কাহিনী। আসলে শুধু ডিজনিই নয়, জেসনের এই জীবনযাত্রা তাক লাগিয়ে দেয় আমাদেরও। ভাবতে শেখায় মানুষ চাইলে কীই না পারে! নিজের ইচ্ছেশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এভাবেও যে লেখা যায় নিজের বেঁচে থাকার গল্প, জেসন তা আমাদের আজ দেখিয়ে দিয়েছেন। তাঁর এই জীবনযাত্রাকে কুর্নিশ না জানিয়ে সত্যিই উপায় নেই!
Discussion about this post