সৌরজগৎ নিয়ে কথা উঠলেই কয়েকটি প্রশ্ন আকছার আমাদের মনে ভিড় করে আসে। মঙ্গল গ্রহে কি আদৌ জল রয়েছে? প্রাণ সঞ্চারের কোনও হদিশ কি মেলে সেখানে? মানুষের পক্ষে কি আদৌ সেই গ্রহে বেঁচে থাকা সম্ভব? এইসব হাজারও প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা বিজ্ঞানীদেরও। রহস্যের সমাধানে এখনও অবধি বহু নভোচারীর মিশনও সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। তাতে বেশ কিছু রহস্যের উত্তর মিললেও নানা অজানা রহস্যই এখনও রয়ে গিয়েছে লোকচক্ষুর আড়ালে। মঙ্গলে লুকিয়ে থাকা অজানা প্রশ্নের সমাধানেই সম্প্রতি নাসা প্রাথমিক ভাবে একটি নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। মঙ্গলে পাঠাতে চলেছে একটি যন্ত্রমানব চালিত হেলিকপ্টার, যা সাহায্য করবে নতুন রহস্য সমাধানে।
চলতি বছরের জুলাইয়ের ১৭ থেকে আগস্টের ৫ তারিখের মধ্যেই ‘ইনজেনুইটি’ নামক হেলিকপ্টারটি প্রকাশের বন্দোবস্ত করছে নাসা। ২০২১-এর ফেব্রুয়ারিতে মূলতঃ তা ওড়ানোর পরিকল্পনাও চলছে। এটি মানুষের তৈরি করা প্রথম হেলিকপ্টার, যা প্রথম অন্য গ্রহের মাটিতে পা রাখতে চলেছে। পার্সিভেরান্স রোভার নামক এক মহাকাশযানের পেটের সঙ্গে যুক্ত থাকবে ইনজেনুইটি। মূলতঃ পরীক্ষামূলকভাবেই ৩০ মঙ্গল দিনের জন্য নিজের কাজ সম্পন্ন করতে চলেছে এই যানটি। এটির খবর প্রকাশের পরই এর ব্যাপারে বিশদে জানতে আগ্রহী হয়ে পড়েন সাধারণ মানুষ। সাধারণতঃ এটি খুবই ছোট এক হেলিকপ্টার। এর ওজন খুবই হালকা হলেও শক্তপোক্ত বস্তু দ্বারাই তৈরি। মঙ্গলের পাতলা বাতাসে কাজ করার জন্য হেলিকপ্টারটির প্রযুক্তিও বিশেষভাবে বানানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে৷ সবথেকে উল্লেখযোগ্য, হেলিকপ্টাররের মধ্যের পুরো প্রযুক্তিই যে নিজের হাতে চালাবে সে কোনও রক্ত-মাংসের মানুষই নয়৷ বরং এক যন্ত্র-মানব। রোবটের সাহায্যেই কাজ-কর্ম করতে সক্ষম এই হেলিকপ্টার। প্রাথমিকভাবে মঙ্গলের বাতাসে প্রযুক্তিগুলি পরীক্ষা এবং প্রদর্শনের কাজে আসবে এটি। এছাড়াও ভবিষ্যতের পরবর্তী মিশনগুলিতে মঙ্গল রোভারে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক পথটির হদিশও খুঁজবে এই হেলিকপ্টার। ফলতঃ ভবিষ্যৎ মিশনগুলির জন্য প্রযুক্তির নানা নতুন নকশা বানাতে কিছুটা সক্ষমও হতে পারে নাসা।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে এখনও অবধি ১৮টি সফল মঙ্গল অভিযানের কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এবার মঙ্গল গ্রহে পা রাখা মাত্রই ইনজেনুইটিও এক নতুন ইতিহাস তৈরি করতে চলেছে। ক্যামেরা যুক্ত এই হেলিকপ্টার মঙ্গলের আকাশে ড্রোন ওড়ানো এবং মঙ্গলে আরও মহাকাশযান পাঠানোরও সুযোগ করে দেবে মনে করছেন বিজ্ঞানীরাই৷ তাহলে আর চিন্তা কিসের! মঙ্গলে জল আছে কি নেই কিংবা পৃথিবীর বাইরেও কোনও গ্রহে মানুষ বসবাস করতে পারবে কি? এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের আর অপেক্ষা করতে হবে মাত্র ক’টা দিন। আর কথায় বলে, ‘সবুরে মেওয়া ফলে!’ তাই অপেক্ষা করতে ক্ষতি কি!
Discussion about this post