হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের উদ্যোগে শুরু হওয়া পুজোটির বয়স নিয়ে মতভেদ থাকলেও অন্তত ৭৫ বছর ধরে হয়ে আসছে পুজোটি। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা রাধিকা হরিজন এই পুজো শুরু করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরেও এতদিন ভাঙাচোরা টিনের চালার নিচে প্রতিমা উঠেছে, মন্ত্রোচ্চারণে পূজা হয়েছে, আর উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন পাড়ার মানুষজন। কিন্তু এবারে পুজো বন্ধ। কারণ, আর্থিক সংকট আর সামাজিক অসহযোগিতা। মালদা জেলার রতুয়া ১ নম্বর ব্লকের সামসী গ্রাম পঞ্চায়েতের রতনপুর গ্রামের হরিজনদের মনে তাই আঁধার।
হরিজন সম্প্রদায়ের অভিযোগ, তাঁরা ছোট জাত বলেই মানুষের সহযোগিতা পাচ্ছেন না। স্থানীয় পুরোহিতরা তাঁদের পুজো করতে অস্বীকার করায় এতদিন বিহারের কাটিহার থেকে পুরোহিত এনে অনুষ্ঠান চালাতে হয়েছে। এবার চাঁদা তোলাতেও নানা বাধা এসেছে, পঞ্চায়েত কিংবা ব্লক অফিস থেকে মেলেনি সাহায্য। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারগুলির ৫০ হাজার টাকার বেশি খরচের ক্ষমতা নেই। কেউ ১০০ টাকা চাঁদা দেয়, আবার কেউ ৫০ টাকাতেই হাত গুটিয়ে নেয়। ফলে প্রতিমা গড়া থেকে শুরু করে ঘটপূজা, কোনও কিছুর আয়োজনই সম্ভব হয়নি।
পাড়ার প্রবীণরা বলছেন, একসময় স্থানীয় হাট ব্যবসায়ী থেকে দোকানদার সকলে সাহায্য করতেন। তখন ঢাকঢোল বাজিয়ে পুজো হত, মানুষের ভিড় জমত মণ্ডপে। কিন্তু এখন ভিন্ন ছবি। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিমা তৈরির কারিগররাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। পাড়ার ছোটদের মুখও ভার, পুজোর কয়েকটা দিন আনন্দে কাটানো আর সম্ভব হবে না। হরিজন সম্প্রদায় স্পষ্ট জানাচ্ছে, আর্থিক অভাবের চেয়ে বড় সমস্যা হলো জাতিগত বৈষম্যের ছায়া, যা এখন তাঁদের উৎসবের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি সহযোগিতা করবেন। তাঁর কথায়, হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষেরও সমান অধিকার রয়েছে দুর্গাপুজো করার। প্রশ্ন উঠছে, সত্যিই কি মহাত্মা গান্ধি বা বাবাসাহেব আম্বেদকরের স্বপ্নের ভারত পুরোনো কুসংস্কার কাটিয়ে উঠতে পেরেছে? নাকি এখনও জাতিগত ভেদাভেদ এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এমন এক ঐতিহ্যবাহী পুজো বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব, গর্ব আর সামাজিক স্বীকৃতির লড়াই?
Discussion about this post