দোমহানি গ্রামের এক আদিবাসী নারী ২৩ বছর ধরে নিজের উদ্যোগে মা দুর্গার পুজো পরিচালনা করছেন। তাঁর লাগেনা কোনো পুরোহিত বা প্যান্ডেল। নিজেই তিনি মন্ত্রপাঠ করেন, সংস্কৃত নয়, শুদ্ধ সাঁওতালি ভাষায় তাঁর আবাহনে পুজো যেন বহুগুণ দৃঢ় হয়। কোনো জাঁকজমক ছাড়া; আলো, প্রচার, বাহ্যিক উল্লাস ছাড়া তাঁর এই পুজো। দৃষ্টান্তমূলক এই আয়োজন সত্যিই প্রাণের পুজো হিসেবে পরিচিত। সেই আদিবাসী নারী হলেন সরস্বতী হাঁসদা।
প্রথম দিনগুলো সহজ ছিল না। সাঁওতালি গ্রামে বা পরিবারে মূর্তি পুজোর নিয়ম নেই। ফলে পরিবারে বিতাড়িত হয়ে দোমহানির ননদের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছিল সরস্বতীকে। এছাড়া ছিল বাহ্যিক প্রতিবন্ধকতা। থানার হস্তক্ষেপও ঘটেছিল। কিন্তু কিছুই সরস্বতীকে নিরুৎসাহিত করতে পারেনি। বরং এসবে তাঁর উৎসাহ, নিয়ম ও নিষ্ঠা বেড়ে যাচ্ছিল। এখন তাঁর এই পুজো হয়ে উঠেছে এলাকার একটি জন উৎসব।
সোশ্যাল মাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে শোনা যায় সাঁওতালি ভাষায় সরস্বতীর সুরেলা মন্ত্রোচ্চারণ। এই পুজো দেখার জন্য কলকাতা, ওডিশা, রাঁচি, টাটা থেকেও অসংখ্য মানুষের আগমন ঘটে। বছরের অধিকাংশ সময় প্রতিমা এক বছরের জন্য রাখা হয় গ্রামে; প্রতি দশমীতে পুরোহিতহীন এই আগের বছরের প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে আবার শুরু হয় নতুন পুজোর অধ্যায়।
এই অনন্য আয়োজন আদিবাসী নারীর সাংস্কৃতিক প্রকাশ, সামাজিক অঙ্গীকার এবং সম্মানের প্রতীক। সরস্বতী তাঁর চার সন্তানের সংসারেও কার্তিক, মনসা, শিবপুজো সবকিছুই নিয়ম মেনে পালন করেন। তাঁর এই সংযম, নিষ্ঠা ও আত্নবিশ্বাসের যাত্রা এখন সম্পূর্ণ এলাকাটির আনন্দোৎসবের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
Discussion about this post