২০০১ সালে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে জন্ম নেয় একটা মেয়ে। অন্যান্য বাচ্চার মত সে যেন স্বাভাবিক নয়। চিকিৎসক বলেন, সে জন্ম থেকেই সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত। তারপর ভেলোর, দীর্ঘ ফিজিওথেরাপি। তবে, ছোটবেলা থেকেই সে বেড়ে ওঠে গান, কবিতা ও শিল্পের পরিবেশে। হাঁটতে ও কথা বলতে শেখা। সঙ্গে সারাক্ষণ ছিলেন মা সুনীতা দেবী এবং বাবা। ছোটবেলা থেকেই স্কুলে শেখা কবিতাগুলো মুখস্থ বলার ক্ষমতা ছিল মেয়েটির। সেখান থেকেই জন্ম নেয় কবিতার প্রতি ভালোবাসা। ডেইলি নিউজ রিল আগেও এই মেয়েটির অনুপ্রেরণাদায়ী গল্প মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল, আর এবার ফিরে এসেছে তার নতুন সাফল্যগুলো পাঠকদের জানাতে। সেই মেয়েটির নাম দেবস্মিতা নাথ।
প্রথমবার “লিচু চোর” আবৃত্তি করে প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিলেন দেবস্মিতা। পরে সুযোগ আসে লোকাল টিভি অনুষ্ঠান ও পুজোর প্যান্ডেলে পারফর্ম করার। ১৩ বছর বয়সে দুর্গাপুরেই ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওয়ার্কশপে যোগ দেন তিনি, এটিই ছিল তাঁর জীবনের বড় মোড়। প্রদীপ ঘোষ, গৌরী ঘোষ, জগন্নাথ বসু, উর্মিমালা বসু প্রমুখ শিল্পীদের কাছে তালিম নিয়েছেন তিনি। শারীরিক সমস্যার কারণে প্রতিটি অনুষ্ঠান বসে করতে হলেও, তাঁর কণ্ঠের জাদু তাঁকে মানুষের মাঝে পৌঁছে দিয়েছে বারবার।
১৮ বছর বয়সে ভাবনা রেকর্ডস থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কবিতার অ্যালবাম “তোমায় প্রণমী”। এরপর একে একে প্রকাশিত আরও তিনটি অ্যালবাম; “অনন্ত প্রেম”, “কাব্যতরী”, “কবিতাশ্রয়”। বর্তমানে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে নতুন অ্যালবাম “কাব্যসাথী”। দেবস্মিতা পারফর্ম করেছেন রবীন্দ্র সদন, সুজাতা সদন, শিশির মঞ্চ, বাংলা একাডেমী, বিড়লা একাডেমীসহ অসংখ্য মঞ্চে। করোনা কালে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তিনি করেছেন ৪৫০টিরও বেশি লাইভ অনুষ্ঠান। সাফল্যের ঝুলিতে যুক্ত হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম সম্মান, বিশ্ব বাংলা নারী সম্মান, বাংলার গর্ব সম্মান, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মান, ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড, এমনকি প্রমীলা কৃতী রত্নের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতিও।
বর্তমানে দেবস্মিতা IGNOU থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর অধ্যয়ন করছেন। আবৃত্তি এখন তাঁর পেশাতে পরিণত হয়েছে। মঞ্চের ব্যস্ততা, নতুন অ্যালবামের কাজ, পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান ও পড়াশোনার মাঝেও তিনি সমাজের পাশে থাকেন। সপ্তাহে অন্তত একদিন করে তিনি অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া শিশুদের পড়াশোনা ও আবৃত্তি শেখান। দেবস্মিতার প্রিয় বন্ধু তাঁর মা। দুর্গাপুরের সেই ছোট্ট মেয়েটি আজ প্রমাণ করে দিয়েছে যে, শারীরিক সীমাবদ্ধতা নয় বরং অধ্যবসায়, স্বপ্ন আর বিশ্বাসই মানুষকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দিতে পারে!
Discussion about this post