২২ এপ্রিল ২০২৫-এর পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার বিভীষিকা থেকে এখনও পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ভারত। সেনা ও গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যেও কীভাবে এই হামলা সংঘটিত হলো, কারা এতো নিখুঁতভাবে এটি পরিকল্পনা করল—তা নিয়ে গভীর সন্দেহে নিমগ্ন ভারত সরকার। হামলার দায় যদিও স্বীকার করেছে লস্কর-ই-তৈবার ছায়াসংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’, কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর আড়ালে লুকিয়ে আছে আরও গভীর ষড়যন্ত্র। ভারতের গোয়েন্দা মহল দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, এই হামলার মূল ছায়া পরিচালনায় রয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই।
এমন এক সময়েই সামনে এল প্রাক্তন পাক সেনা অফিসার আদিল রাজার বিস্ফোরক অভিযোগ। সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজা দাবি করেছেন, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের প্রত্যক্ষ নির্দেশেই এই বর্বর হামলা চালানো হয়েছে ভারতের কাশ্মীরের উপর। আদিল রাজা তার এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন, “পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্র মারফত নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, পেহেলগাঁওয়ের এই সন্ত্রাসী হামলা জেনারেল আসিম মুনিরের নির্দেশেই চালানো হয়েছিল। অথচ গোটা পাকিস্তান এই দুঃসাহসের বিষয়ে অবগত নয় এবং এ সম্পর্কে কিছুই জানে না।”
এই বিস্ফোরক মন্তব্য সামনে আসার পর, আন্তর্জাতিক মহলে আরও বেশি চাপে পড়েছে ইসলামাবাদ। ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে বাছাই করে হত্যা চালানোর ঘটনায় ভারতের অভ্যন্তরেও নানা জায়গায় হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। গোয়েন্দা তদন্তে উঠে এসেছে হামলাকারীদের সঙ্গে পাকিস্তানি সংযোগের একাধিক প্রমাণ। এর পরিপ্রেক্ষিতে, ভারতের কঠোর অবস্থান মোকাবিলায় পাকিস্তানও রাজনৈতিক পাল্টা চালে নেমেছে। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকে পাকিস্তানি আকাশসীমা ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি, ওয়াঘা সীমান্ত সিল করা, ভারতীয় কূটনীতিকদের সংখ্যা কমানো ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য স্থগিত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়।
কিন্তু প্রশ্ন জাগে—এই হামলা পাকিস্তানকে ঠিক কী লাভ দিল? এর উত্তর নিহিত রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী এক ভূরাজনৈতিক অভিসন্ধিতে। ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর কাশ্মীরের আর্থসামাজিক দৃশ্যপটের আমূল বদলেছে; শান্তি ও বিকাশের স্পষ্ট ছাপ পড়েছে উপত্যকায়। পর্যটনে ঘুরে দাঁড়ানো, স্থানীয় অর্থনীতির উন্নতি এবং কাশ্মীরীদের মধ্যে নতুন আশার উন্মেষ—এই পরিবর্তনই যেন পাকিস্তানের কৌশলগত ব্যর্থতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ, একবার যদি কাশ্মীর আত্মবিশ্বাসী ও স্বনির্ভর হয়ে ওঠে, তাহলে পাকিস্তানের পক্ষে তাদের ব্রেনওয়াশ করে দখলের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করা আর সম্ভব হবে না। তাই হয়তো এবার টার্গেট করা হলো সেনাকে নয়, বরং নিরীহ পর্যটকদের। এ যেন অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক আঘাত হেনে কাশ্মীরকে আবার অস্থির করে তোলার একটা প্রচেষ্টা। এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন একটাই—এবার ভারত কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে? আবার কি দেখা যাবে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দৃশ্য, নাকি শুরু হবে এক নতুন সম্মুখসমর?
Discussion about this post