একদা বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে ওঠা শহর ঢাকা আজ ফুলেফেঁপে বুড়িগঙ্গাকেই গিলে ফেলছে প্রায়। মুঘলদের ছোঁয়ায় গড়ে ওঠা শহরটি কালক্রমে বিকশিত হয়েছে পরিকল্পিত ও অপরিকল্পিত দু’ভাবেই। একুশ শতকে তা হয়েছে বেপরোয়া। একবার একটি আড্ডায় একজন ঠাট্টা করে আমায় বলেছিলেন, ‘’একসময় বুড়িগঙ্গার তীরে ঢাকা অবস্থিত ছিল, এখন ঢাকার তীরে বুড়িগঙ্গা।” সদরঘাট, বাংলা বাজার, তাঁতি বাজার, সূত্রাপুরের মতো এলাকা নিয়ে পুরনো ঢাকা তৈরী হয়। এখানকার আদি বাসিন্দারা অবশ্য এর নাম দিয়েছেন ‘পুরান ঢাকা’। সেই সূত্রেই দেশজুড়ে এ নাম বিখ্যাত। প্রাচীন স্থাপত্য আর নানা মুখরোচক খাবারের আবেদন পুরনো ঢাকাকে করে তুলেছে অনন্য। তাই মানুষ ছুটে আসেন আধো-আলো আধো-অন্ধকারে জালের মতো বিস্তৃত পুরান ঢাকার সরু গলিতে।
পুরনো ঢাকার বিখ্যাত খাবারের কথা উঠলে বেচারাম দেউড়ীর হাজী নান্নার মোরগ পোলাও প্রথম সারিতেই থাকবে। ৬৩ বছর আগে শহরের মৌলভীবাজারে মাদুর পেতে শুরু করা দোকানটির পরবর্তী স্থায়ী ঠিকানা হয় বেচারাম দেউড়ী। দোকানটি আজও সে ঠিকানাতেই আছে, শুধু বেঁচে নেই হাজী নান্না মিয়া। ২০০৫ সালে তিনি মারা যান। দোকানের নাম ‘হাজী নান্না বিরিয়ানি’ হলেও এখানকার প্রসিদ্ধ পদ হল মোরগ পোলাও। এটি তৈরি করা হয় বিভিন্ন রকমের মশলা মাখানো মুরগির মাংস ও বাদামি করে ভেজে নেওয়া পেঁয়াজ বাটা দিয়ে। রান্নায় নান্না মিয়ার মশলার কারিকুরি তো অবশ্যই ছিল, নয়তো এতটা লোকপ্রিয় হয়ে ওঠা আদৌ কি সম্ভব! মশলার নিজস্বতার বিষয়টি সকলেই গোপন রেখে থাকেন, নান্না মিয়াই বা বাদ যাবেন কেন!
তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যে, বর্তমানে যারাই হাজি নান্নার দোকানে রাঁধুনি হিসেবে রয়েছেন তাঁরা সকলেই নান্না মিয়ার থেকে সরাসরি রান্না শিখেছেন। নান্নার মোরগ পোলাও বিখ্যাত হলেও খাসির কাচ্চি বিরিয়ানিও কম জনপ্রিয় নয়। হাজী নান্না মিয়ার রান্নার প্রক্রিয়াটি ধরে রাখার ফলে জনপ্রিয়তায় এখনও ভাঁটা পড়েনি। তবে এ সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে বেশ কিছু দোকান কাছাকাছি নামে ব্যবসা করছে। এ নিয়ে নতুন খাদ্য রসিকরা যারা আসল জায়গাটি চেনেন না। ফলে তারা কিছুটা বিপদেও পড়েন। এতো এতো নকল দোকানের ভিড়োও বেচারমা দেউড়ির হাজি নান্নার বিরিয়ানির জনপ্রিয়তায় কমতি নেই। মানুষ ঠিক খুঁজে বের করে ফেলেন আসল নান্না।
নান্না মিয়ার মৃত্যুরপর তাঁর ভাইপো আবদুল্লাহ বাবুল চাচার উত্তরাধিকারী হিসেবে বর্তমানে নান্না বিরিয়ানির প্রধান শাখা বেচারাম দেউড়ির দেখাশোনা ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। বর্তমানে ঢাকায় সাতটি দোকান আছে যেগুলো নান্না মিয়ার বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনরা মিলে পরিচালনা করেন।
চিত্র ঋণ – আওয়ার ঢাকা সিটি
Discussion about this post