ডিসেম্বর স্বমহিমায় তার শ্রেষ্ঠ রূপ নিয়ে বাংলার বুকে গড়ে তুলেছে শীতের সাম্রাজ্য। শেষ সপ্তাহে তাই রাজ্য রাজধানী কলকাতাও সেজে উঠেছে মাসের সেরা উৎসব ক্রিসমাসের সাজ পোশাকে। ক্রিসমাস বা বাঙালির বড়দিন মহা সমারোহে উদযাপিত হয় শহরের বুকে। আলোক সজ্জায় ঢেকে যায় পার্কস্ট্রিট, ধর্মতলা, নিউ মার্কেট সহ কম বেশি গোটা শহরটাই ক্রিসমাসের নয়নাভিরাম সাজে। সান্তাক্লজের কাছ থেকে উপহার পেতে যেমন উৎসুক থাকে কচি কাঁচারা, বাদ যায় না বছর শেষে আমোদের জন্য মরিয়া বড়দেরও দল। ক্রিসমাস অর্থাৎ পরম পিতা ঈশ্বরের বরপুত্র যীশুর জন্মদিন এক প্রকার বাংলার সংস্কৃতিতে সম্পৃক্ত। গির্জাঘরের পাশাপাশি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ধনী-দরিদ্র সকলের বাড়ি সেজে ওঠে আলো ও ক্রিসমাস ট্রিতে। সঙ্গে চলে কেকের আয়োজন। বছরের শেষে তাই জীবন সংগ্রামের ক্লান্তি ভুলে সাধারণ আমজনতা ফূর্তির কাছে নিজেদের সঁপে দিতে পিছুপা হয় না।
কলকাতায় ক্রিসমাসের সাজ সজ্জার সামগ্রী প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লার দোকানপাটে পাওয়া গেলেও নিউ মার্কেট আজও ক্রিসমাস শপিংয়ের ‘হটস্পট’। ব্রিটিশ স্থাপত্যের অতীত স্মৃতি বহন করা এস এস হগ মার্কেটের চত্বর তো বটেই, গোটা নিউ মার্কেট অঞ্চলটাই ক্রিসমাসের থিমে থাকে সেজে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ক্রিসমাস ট্রি, বেল, স্টার সহ সান্তা বুড়োর নানা স্যুভেনির ঢালাও বিক্রি হচ্ছে জামা-জুতো ও কেক-পেস্ট্রি-কুকিজ ও মার্শমেলোর সঙ্গে।
নিউ মার্কেটের ছোট থেকে বড় ব্যবসায়ী ক্রেতাদের খুশি করতে দেদার পসরা নিয়ে প্রতিবারের মতো হাজির হয়েছেন হাসিমুখে। সান্তা টুপি দু’ধরণের বিক্রি হচ্ছে মার্কেটে। লাইটিং সান্তা ক্যাপ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, সাধারণ সান্তা টুপির দাম ৩০ টাকা। ক্রিসমাস থিমের ওপর তৈরী করা চশমার দাম ৮০ টাকা ও হেয়ার ব্যান্ড বিক্রি হচ্ছে ৭০টাকায়। পুরনো নিউ মার্কেট চত্বরের প্রবীণ ব্যবসায়ী সাব্বির আহমেদের বক্তব্য অনুযায়ী, বাজারে আশানুরূপ ভিড় না হলেও সপ্তাহান্তে বাজার তুঙ্গে থাকারই কথা। অসংখ্য অস্থায়ী স্টলে রয়েছে ক্রিসমাসের নানা সাজ সজ্জার সামগ্রী ক্রেতাদের মন কাড়ার জন্য।
ক্রিসমাস রিং বিক্রি হচ্ছে মাপ অনুযায়ী বিভিন্ন দামে। ছোট রিংগুলোর দাম পড়ছে ১৫০ টাকা, বড় রিংগুলো ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রিসমাস বেলও দশটার প্যাকেটে ৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রিসমাস ট্রি উচ্চতা অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ৭০০০ টাকা অবধি। সান্তাও মাপ অনুযায়ী ২০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। দরদামের সুযোগ ছাড়াও একগুচ্ছ সামগ্রীর কেনাকাটার ওপর ১০ শতাংশ ছাড় মিলছে বলে একাধিক বিক্রেতা জানান। শীতে পারদ ক্রমশ নিম্নমুখী হলেও উৎসব ঘিরে তিলোত্তমার উন্মাদনার উষ্ণতা ঊর্ধ্বমুখী। ঘরে ঘরে ক্রিসমাসের জন্য ঘিরে থাকা আনন্দের আয়োজনকে তাই বাস্তবতার রূপ দিতে আসতেই হবে নিউ মার্কেটে। যীশুর কৃপার হাত যেমন সমানভাবে সবার ওপর ঠিক তেমনই নিউ মার্কেটের ‘ক্রিসমাস ডিলাইট’ অপেক্ষায় রয়েছে সবার। মেরি ক্রিসমাস!
Discussion about this post