৬০০ বছর ধরে এই রাজবাড়িতে পুজো হয়ে আসছে। রাজবাড়ি, আর রাজা থাকবেন না, তাই কি হয়? ফলে রাজাও আছেন। বংশানুক্রমে রাজা এসেছেন, রাজা গেছেন। বর্তমানেও পুজোর উদ্বোধন এবং পুজো দুটিই করেন রাজবাড়ির এই রাজা। এই রাজবাড়ির অদূরেই রয়েছে আর এক দেবীর মন্দির। সেই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বড়ু চন্ডীদাস। হ্যাঁ, বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগীয় কবি বড়ু চন্ডীদাসের কথাই হচ্ছে। যিনি লিখেছেন ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তনকাব্য’। এই প্রাচীন ঐতিহ্যশালী রাজবাড়িটি হল বাঁকুড়ার ছাতনার রাজবাড়ি।
বাঁকুড়ার জেলার এই রাজবাড়ির দুর্গা পুজোর ইতিহাসটি বেশ অবাক করা। সামন্তভূম ছাতনা এবং মল্লভূম বিষ্ণুপুরের মধ্যে কোন এক বিবাদের পরেই শুরু হয়েছিল প্রাচীন ছাতনা রাজবাড়ির দুর্গা পুজোটি। বিবাদটি শুরু হয়েছিল ছাতনার ভূমিপুত্র চারণকবি বড়ু চণ্ডীদাসকে নিয়েই। বিবাদ মেটাতে হয় সন্ধি। শোনা যায়, যে সন্ধিতে বলা হয়েছিল যে, সামন্তভূমের কুলদেবী মা বাসুলি পুজিত হবেন বিষ্ণুপুরে এবং মল্লভূমের মা মৃন্ময়ীর আরাধনা হবে সামন্তভূম ছাতনায়। সেই থেকেই শুরু হল ছাতনা রাজবাড়ির দুর্গোৎসব। কিন্তু পুজোর নিয়মনীতির আদল বিষ্ণুপুরী ঘরানার।
রাজবাড়ীর দুর্গা পুজো বরাবর নিখুঁত ভাবে প্রথা মেনে করা হয়। কিন্তু অবাক করা বিষয়টি এটাই, যে রাজ পরিবারের সদস্যরা পুজোর পর দেবীর মুখ দর্শন করেন না। পা রাখেন না দেবীর মন্দিরে। পুজোর শেষে বিসর্জনের কাজটি সারা হয় সন্ধ্যে নামার পর, অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে। রাজবাড়ির বর্তমান রাজা প্রদীপ সিংহ দেও। তিনি নিজের হাতেই পুজো করেন। পূজার পর বাসুলি দেবীর মন্দিরে গিয়েও পুজো দেন তিনি। বিসর্জনের সময় রাজ পরিবারের সদস্যরা থাকেন বাড়ির ভিতরে। বিসর্জনের দিন সূর্যাস্তের পরে কিছু মানুষ আসেন রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে। বংশপরম্পরা অনুযায়ী এনারাই করে এসেছেন বিসর্জনের কাজ।
চিত্রঋণ : Yappe.in
Discussion about this post