দিনের পর দিন পশ্চিমবঙ্গসহ সারা দেশে সাইবার জালিয়াতির পরিমাণ বেড়ে চলেছে। প্রতিদিনই, অপরাধীরা খুঁজে বার করছে অপরাধের নিত্য নতুন পন্থা। বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ভারতের প্রায় ৩৯ শতাংশ পরিবারই সাইবার জালিয়াতির শিকার। কেউ ভূয়ো কাজের লোভে টাকা ঢেলেছেন, কেউ ভূয়ো ওয়েবসাইটের লিঙ্কে ক্লিক করে টাকা হারিয়েছেন, কারোর কাছ থেকে ব্যাঙ্ক বা ইলেকট্রিক অফিসের নাম করে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে টাকা। এমন বিভিন্ন ঘটনার সম্মুখীন মানুষ হয়ে চলেছেন।
এক সমীক্ষা বলছে, বেঙ্গালুরুর বাসিন্দারা চলতি বছরের বিগত ৯ মাসে সাইবার জালিয়াতির জন্য প্রতিদিন এক কোটির বেশি টাকা হারিয়েছেন। এই বছরেই হায়দ্রাবাদে ৭০০ কোটি টাকার জালিয়াতি করে ধরা পড়েছে এক চক্র। মুম্বই, দিল্লি, কলকাতাও এই বিষয়ে কোনো অংশে কম নয়। নিজের অজান্তে সাইবার অপরাধেও অনেকে জড়িয়ে পড়ছেন। ডার্ক ওয়েবের জাঁতাকলে ঢুকে পড়ছেন। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হল, সারা দেশের বিভিন্ন শহরে যতবার সাইবার প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কলকাতা।
পুজো, বা যেকোনো উৎসবের সময় এই প্রতারণার মাত্রা বেড়ে যায়। অনলাইন শপিং, ইলেক্ট্রনিক্স এর সেলের বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারিত হন মানুষ। এছাড়া, কখনও ওয়ার্ক ফ্রম হোম, কখনও বিদ্যুৎ বিল, কখনও গাড়ি বা ফ্ল্যাটের বিমার নাম করে মানুষকে প্রতারিত করা হচ্ছে। আধার কার্ডের তথ্য, ভুয়ো সিমকার্ড, কলসেন্টার, ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমেও চলছে প্রতারণা। প্রতারণার নিত্যনতুন ফন্দি আঁটছে প্রতারকরা। ইদানীং গুগলের ভুয়ো কাস্টমার কেয়ার নম্বর থেকেও জালিয়াতি হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। ইন্টারনেটে কাস্টমার কেয়ার বা কাস্টমার হেল্পলাইন নম্বরের নামে চলছে প্রতারণা। গত পাঁচ বছরে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে সাইবার অপরাধ। তবে এসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে ব্যাঙ্ক প্রতারণার ঘটনা।
এ বিষয়ে ডেইলি নিউজ রিল কথা বলেছিল ‘রুটনিক ল্যাবস’ নামক কলকাতার এক সাইবার সিকিউরিটি সংস্থার সঙ্গে। সংস্থার অন্যতম কর্ণধার অরিন্দম হালদার বলছেন এই ধরনের জালিয়াতির শিকার প্রধানত বয়স্ক মানুষ, যাঁরা মূলত ইন্টারনেট বা মোবাইল ফোনে অভ্যস্ত নন। তবে টিনএজার বা টেকস্যাভি মানুষরাও এই প্রতারণার শিকার হয়ে থাকে। অরিন্দমের মতে, “এই অবস্থা থেকে বাঁচতে হলে নিজেদের এবং মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। সংবাদ মাধ্যম, বিভিন্ন সাইবার সিকিউরিটি ক্যাম্পেনিং এবং সরকারের সাহায্যেই তা করা সম্ভব।’’ তিনি মনে করেছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সাইবার ক্রাইমের মোকাবিলা করার জন্য আমাদের সবাইকে একজোট হতে হবে। ডিজিটাল ভারতের সাথেই এক সাইবার সুরক্ষিত ভারত তৈরি করা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।
Discussion about this post