খাঁটি দুধ জ্বাল দিয়ে ক্ষীরের পাকে যোগ হয় চিনি। না, অন্য আর কোনো উপকরণের প্রয়োজন নেই প্যাঁড়া সন্দেশের জন্য। তবে এতেই পুরো দেশের জনপ্রিয়তা লাভ করেছে পাবনার প্যাঁড়া সন্দেশ। চিনি-গুড়-ছানার সন্দেশের তুলনায় টাটকা ক্ষীরের এই মিষ্টি পাবনার অন্যতম আকর্ষণ।
প্যাঁড়া সন্দেশ বানানো বাংলাদেশে সর্বপ্রথম শুরু হয় নওগাঁ জেলায়। মহেন্দ্রী দাস নামে বিহারের কোনো এক নবাবের ময়রা প্রথম এই মিষ্টি প্রচলন করেন। শোনা যায় কোনো এক যুদ্ধে সেই নবাব মারা যান এবং সেই ময়রা তার প্রাণ হাতে পালিয়ে আসেন নওগাঁ জেলায়। সেখানেই জীবিকা নির্বাহের জন্য, ঠাকুরের প্রসাদের জন্য বিভিন্ন মন্দিরের সামনে বিক্রি করেন এই মিষ্টি। খাঁটি দুধ এই মিষ্টির স্বাদের একমাত্র রহস্য। ধীরে ধীরে এই মিষ্টির খ্যাতি আশেপাশের সব জেলাতেই ছড়িয়ে পড়ে। পাবনা জেলার দূরত্বও নওগাঁ থেকে খুব একটা দূরে নয়।
প্রায় দু’শো বছরের পুরনো পাবনা শহরের সবথেকে প্রাচীন মিষ্টির দোকান লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভান্ডারের প্রধান আকর্ষণ এই প্যাঁড়া সন্দেশ। জানা গেছে এই দোকানেরই কোনো এক পুরনো কর্মচারী নওগাঁ জেলার মানুষ আর তার হাত ধরেই পাবনায় এই মিষ্টির শুরু হয়। এছাড়াও শহরের আরও কিছু দোকান যেমন প্যারাডাইস, শ্যামল মিষ্টান্ন ভান্ডারের প্যাঁড়াও লোভনীয়। এক চার (কড়াই) দুধ জ্বাল দিয়ে চার কিলো প্যাঁড়া প্রস্তুত হয়। দুধ শুকিয়ে ক্ষীর যখন হাতার সাথে লেগে যায় সেই অবস্থায় তৈরি হয় সন্দেশ। এই সন্দেশ বানাতে নির্দিষ্ট কোনো ছাঁচ ব্যাবহার করা হয় না। কারিগররা নিজেদের হাতের দুই আঙ্গুলে চেপে আকৃতি দেন এই সন্দেশের।
প্যারাদায়ক পরিস্থিতিতেও হাসি ফোটাবে সরিষাবাড়ির প্যাঁড়া সন্দেশ!
ওপরটা শক্ত হলেও ভেতরটা নরম আর মুখে নিলে গলে যায় এই সন্দেশ। একসময় এই মিষ্টি ঠাকুরের পুজোর জন্য বানানো শুরু হলেও এখন বিয়ে বাড়ী থেকে শুরু করে ঈদ, জন্মদিন, পরীক্ষার ফলাফল সব কিছুর জন্যই এর মিষ্টির চাহিদা তুঙ্গে। শহরের বাইরের অতিথিদের আপ্যায়নের জন্যও এই মিষ্টির কথাই প্রথম ক্রেতাদের মাথায় আসে। শুকনো মিষ্টি হওয়ায় এটি সহজেই নষ্টও হয় না। ফ্রিজ ছাড়াই ১৩-১৪ দিন থাকে। ক্ষীরের মিষ্টি, তাই এখনো হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্মাষ্টমী বা অন্য যে কোনো পুজোয় প্যাঁড়ার খোঁজই সবার আগে করা হয়।
Discussion about this post