আর মাত্র কয়েকদিন বাকি খুশির ঈদের। চারিদিকে এখন ঈদের আমেজ। জমজমাট ঈদের কেনাকাটার বাজার, সঙ্গে ইফতারের বাজার–সব মিলিয়ে তোড়জোড় এখন তুঙ্গে। জাতপাতকে তুড়ি মেরে এখন সকলেই সামিল হন সবরকম উৎসবেই। তাই স্বাভাবিক ভাবেই ঈদ নিয়ে উন্মাদনা থাকে সকলেরই। উৎসব কি আর খালি মুখে জমে! তাও যদি তা হয় ঈদ, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। রমজানের পরের নতুন চাঁদ যেমন জানান দেয় ঈদের শুভারম্ভের, তেমনই যে পদ ছাড়া ঈদের কথা ভাবাই যায় না সেটি হল সিমুই। শুকনো জর্দা সিমুই হোক বা দুধে ভেজানো লাচ্ছা সিমুই— ঈদের দিনে এই পদের জুড়ি মেলা ভার। রোজার ঈদে সিমুই হবে না একথা তো কল্পনারও অতীত।
অনেকেই মনে করেন, ঈদের সঙ্গে সিমুইয়ের এই যে মিষ্টি একটা সম্পর্ক তা হয়তো যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। কিন্তু না, সিমুই নামক মিষ্টি এই খাবারের চল একেবারেই খুব পুরনো নয়। এমনকি মুঘল অথবা নবাবি আমলেও ভারতীয় উপমহাদেশে এই খাবারের উল্লেখ পাওয়া যায় না। তাই অনেক ইতিহাসবিদদের মতে, উনিশ শতকের শেষ দিক থেকেই ঈদে প্রচলন শুরু হয় সিমুইয়ের পায়েসের। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে ৩০ কিংবা ৪০-এর দশক থেকে। তারপর বাড়ির রসুইঘরে পাকাপাকি জায়গা করে নেয় এই খাবার। আর এখন তো ঈদ সম্পূর্ণই হয় না সিমুইয়ের স্বাদ না নিয়ে!
ভারতীয় উপমহাদেশে এই খাবারের হরেক রকম নামও রয়েছে। বাংলাতে অবশ্যই সিমুই, সেমাই বা সামাই বলা হয়। তবে দক্ষিণ ভারতে এই পদটিকে বলে সেভাই। মারাঠিতে বলে সেমাইয়া, গুজরাটিতে সেই এবং তেলেগু, তামিল ও মালায়লামে বলে সেমিয়া। গ্রীসে অবশ্য এইরকম একটি খাবারের প্রচলন রয়েছে। তবে তার স্বাদ এবং রান্নার কায়দা একেবারেই এদেশের মত নয়। অনেকটাই আলাদা। তবু অনেকে মনে করেন গ্রীসের রাজা আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করলে স্বভাবতই গ্রীসের সঙ্গে ভারতের পরিচয় ঘটে। তাই এই ঘটনার ফলেই গ্রীসের ‘সেমিদালিস’ বা ‘সমিদা’ অপভ্রংশ হয়ে ভারতের সিমুই নাম নিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছেছে। তবে এই খাবারের গায়ে গ্রীসের গন্ধ থাকলেও সিমুই আসলে অত্যন্ত সুস্বাদু ভারতীয় এক পদ–এবিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই।
কখনো সাদা বা কখনো হালকা বাদামি রঙের সরু সরু সুতোর মতো কাঠি। খাঁটি ঘিয়ে ভাজলে কী অসাধারণ এক গন্ধ বেরোয়! তারপর দুধে ফেলে রান্না করলেই তৈরি পায়েস। শুধু ঈদ বলে নয়, বছরের বিভিন্ন সময় আমরা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করি এই অনবদ্য স্বাদের সিমুইয়ের পায়েস।
Discussion about this post